নিবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নিবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের নিপীড়ন

 

পলাতক বম গ্রামবাসী, ১ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের নিপীড়ন একটি নিয়মিত এবং সাধারণ ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারে থাকা সবগুলো সংগঠনই নানাভাবে অন্য জাতি সত্ত্বার লোকদের উপর নিপীড়ন এবং গণহত্যা চালিয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা বিচারের আওতায় না এনে উলটো বিভিন্ন সময় দমনপীড়নকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিশেষত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সাধারণ পাহাড়িদের দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল।
.
এই আইন থাকার পরেও ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান পার্লামেন্টে 'অস্থিতিশীল অঞ্চল বিল' উত্থাপন করেন। এই বিলে অস্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত এলাকার পুলিশ, তৎকালীন বিডিআর ও সেনবাহিনীর নিম্নপদস্থ সদস্যদেরও যে কাউকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার সন্দেহেগ্রেফতার কিংবা গুলি করার ক্ষমতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এমনকি এই বিলের কার্যবিধি ও ক্ষমতাকে কোন বিচার বিভাগীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করার সুযোগও ছিল না। পার্লামেন্টে এই বিল উত্থাপনে সেনাবাহিনীর তৎপরতা উদ্ধত গতি নিয়েছিল। তৎকালীন পার্লামেন্ট সদস্য উপেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এই বিলকে পার্বত্য সমস্যার গণহত্যামূলক সমাধান আখ্যায়িত করেছিলেন। শেষাবধি প্রবল বিরোধিতার মুখে বিলটি পার্লামেন্টে গৃহীত হয় নি।
.
১৯৯২ সালের সন্ত্রাস দমন আইন (CTAA) পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিচার বহির্ভূত কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারিত করে। CHT কমিশনের রিপোর্ট মতে, এই আইনটি প্রনয়ণের দেড় বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আইনের আওতায় ২০০ এর অধিক মামলার বিচারকার্য চালানো হয়েছে। যার অধিকাংশই জনসংহতি সমিতি ও তার অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। এই আইনের সর্বনিম্ন সাজা ৫ বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি ছিল। ১৯৯৫ সালে সরকার আইনটি বাতিল করে।
.
এসব ঘটনা থেকে পার্বত্য সমস্যার সমাধান বিষয়ে শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার হয়ে উঠেস্পষ্টতই একটা বৃহত জনগোষ্ঠির আত্মনিয়ন্ত্রণের (Right of Self-Determination) অধিকার তথা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার প্রশ্নে একটি পশ্চাৎপদ, দমনপীড়নমূলক এবং বিধ্বংসী সামরিক সমাধান খোঁজার দিকেই সবকটি সরকারের নজর ছিল। এ এক অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় পাপ। কেননা মাত্র আগের দশকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বাঙ্গালি জাতির উপর সর্বোচ্চ মানবিক বিপর্যয় আরোপ করে এই প্রকারের ভুলেরই মাশুল দিয়েছিল এবং সেই ঘটনায় নিপীড়িত স্বয়ং বাঙ্গালি জাতিই সেই একই দমনপীড়ন শুরু করেছিল পাহাড়ের অধিবাসীদের উপর। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ থেকে কোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শিক্ষা না নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী চিন্তারই সম্প্রসারণ।

বুধবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২

পেশাগত জীবনে টাকার ভূমিকা

 


পুঁজিবাদ যে সমাজ আমাদের সামনে হাজির করেছে, সেখানে পেশাগত দক্ষতা ও নৈতিকতা বিলুপ্ত হবার পথে। পেশাগত জীবনে একজন অধ্যাপক এবং একজন ব্যাসের সহায়কের পার্থক্যগুলো এখন ঘুচে যাচ্ছে। অথবা একজন বিজ্ঞানীর সাথে একজন মুদি দোকানদারের একই আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানাগারে গবেষণাকারী একজন বিজ্ঞানী যেমন টাকালোভী হয়ে গেছেন তেমনি একজন সরল কৃষক আর সরল নেই, তিনিও লোভে পড়ে বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছেন পর্যন্ত।

আমি সব ক্লাসে একটি গল্প বলি, শিক্ষকদের বুঝতে আপনার কাজে লাগবে। আমরা বাস স্টপে দেখি, বাসের হেলপার চেঁচাচ্ছে, এই আসেন, মতিঝিল ২০ টাকা, ডাইরেক্ট মতিঝিল ২০ টাকা, আসেন সিট আছে খালি ২০, নন স্টপ মতিঝিল ২০ টাকা।

অন্যদিকে একজন শিক্ষক অবিরাম ডেকে চলেছেন, কেমিস্ট্রি খালি ৫০০ টাকা, ইংরেজি খালি ৫০০ টাকা, ৪ মাসে কোর্স শেষ, প্রতি মাসে খালি ৫০০। আগে আসলে আগে শুরু, জনপ্রতি খালি ৫০০। আর ডাক্তারদের কথা তো বলাই বাহুল্য, ডাক্তার মানেই দোকান খুলে বসা।

অন্যদিকে আছে ইঞ্জিনিয়াররা, তারা যে কত ভাবে টাকা পয়সা নয় ছয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তা ভাবা যায় না। এগুলা কয়েকটি পেশার আলোচনা মাত্র। বাস্তব পুঁজিবাদ এভাবে হাজার হাজার পেশাগুলোকে পুঁজির জোয়ালের নিচে বন্দি করেছে।

বাসের হেলপারের সাথে শিক্ষকের বা ডাক্তারের পার্থক্য কোথায়? একেবারেই পেশাগত পার্থক্যগুলো ঘুচে গেছে। যেসব শিক্ষক বা ডাক্তার ব্যবসা করতে পারে না, তারা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকের সাথে ঘোট পাকায়, কমিটি হান তান ভাউচার লইয়া থাকে।

টাকালোভী মানুষকে বোঝার জন্য, এই পুঁজিবাদী সমাজকে বোঝার জন্য, এইসব উদাহরণ দেখা যায়। ব্যক্তিগতভাবে দেখলে, আপনি শুধু একটি গাছ দেখতে পাবেন, জঙ্গল দেখতে পাবেন না; আর শুধু জঙ্গল দেখলে আবার গাছ দেখতে পাবেন না। আপনাকে সার্বিক এবং বিশেষ দুভাবেই দেখতে হবে। সত্য দেখে এই সমাজকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে শিক্ষকের কাজ, কিন্তু শিক্ষকরা দেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেত্ন নয়। যারা দেখে না, তাদেরকে অন্ধ বলা হয় এই সমাজে।

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

আত্মমর্যাদাহীন মধ্যবিত্তের ভাষা সমস্যা

 


বাংলা ভাষায় আমরা ইংরেজি শব্দ অহরহ যুক্ত করি। এছাড়াও বাংলায় অন্য ভাষা যেমন ফারসি ও পর্তুগীজ থেকেও অনেক শব্দ আত্মীকৃত করা হয়েছে। কিন্তু এসবের খুব একটা প্রয়োজন কোনোকালেই ছিল না, এখনো নেই। চীনের বিভিন্ন ভাষায় র‍্যাম, হার্ড ডিস্ক, প্রসেসরসহ কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট সব শব্দেরই নাকি একাধিক চীনা অনুদিত শব্দ আছে। বাংলাতেও সেসব সহজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য পরিভাষার বিকাশ খুব দ্রুত হওয়া দরকার।

যারা উপনিবেশবাদীদের অত্যাচারের শিকার হয়নি, তারা স্বাধীনভাবেই নিজ ভাষাকে রক্ষা করে থাকে। আমার যেসব জাতি নয়া উপনিবেশবাদের শিকার হচ্ছে না, তারাও নিজ ভাষাকে রক্ষা করতে পারছে। চীন এবং নেপাল হচ্ছে এমন দুটি দেশ যারা নিজেদের ভাষাকে রক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশে উপনিবেশিক নিপীড়নের ফলে  আত্মমর্যাদাহীনতার কারণে নিজ ভাষাতে ইংরেজি বা অন্য ভাষার চিহ্নগুলো বাড়ছে। যেমন, নেপালীরা তাঁদের নিজস্ব ভাষাগুলিতেই কথা বলে। তাদের নিজ ভাষাগুলোকে তারা মিশ্র ভাষা বা খিচুড়ি ভাষা করেনি। নেওয়ারী ভাষা, নেপালী ভাষা, ডোটেলি ভাষা ইত্যাদি সবগুলাই সংস্কৃত জাত, কিন্তু ওরা বাংলা অঞ্চলের মতো বাংলা আর ইংরেজি মিশ্রিত করেনি।

আমরা চাইলেই কিছু শব্দ বাংলা চালু করা যেত, পরিভাষাগুলোকে সংস্কার করা যেত, নতুন নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করা যেত। যেমন, নেপালে ঝোলা শব্দটা খুব চলে, কেউ ব্যাগ বলে না। এখন আমরা বলি টিফিন ক্যারিয়ার, এটার বাংলা হওয়া দরকার।  এটাকে খাবার ঝোলা বলা যেতে পারে, যদিও টিফিন ক্যারিয়ারে জল থাকে না। জল রাখবার জক বা জগ নামক পাত্র আছে যাহা পানির পট নামে সমধিক পরিচিত।

তবে বাঙালি মধ্যবিত্ত যেহেতু উৎস থেকেই দাসত্বে অভ্যস্ত, তাই তাদের কাছে বাংলাটা ঠিক আসে না। তাই আমরা বলছি পরিভাষার গ্রহণ করার মানসিকতা থাকা চাই সংখ্যাগরিষ্ঠের। ফেসবুক অনুবাদে যখন অনেকে কাজ করতেন, তখন কলেজের অনুবাদে মহাবিদ্যালয় লিখতেন, কিন্তু অধিকাংশ বাঙালি সন্তান কলেজের অনুবাদে কলেজকেই ভোট দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আপাতত একটা শব্দই গ্রহণ করেছে, open university না বলে লোকজন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বলে। এই ওপেন চালু না হয়ে যে উন্মুক্ত চালু হয়েছে তা থেকেই আমার মনে হয় বাংলা শব্দ চালু করলে লোকজন গ্রহণ করবে। কিন্তু নতুন শব্দ একটি ভাষায় যখন আসে তখনই তার অনুবাদ করে সেটি চালু করা দরকার। যখন বাইসাইকেল এসেছিল, সাথে Van ও এসেছিল, তখনই শব্দ দুইটার বাংলা চালু করলে আজকে ভ্যানের বাংলা বা বাইসাইকেলের বাংলা খুঁজতে হতো না।

আমি নিজেও একসময় বিশ্ববিদ্যালয় আর মহাবিদ্যালয় লিখতাম। পরে বাদ দিয়েছি। আমি যখন Utopia নিয়ে লিখি তখন কল্পলোক শব্দটি দিয়ে করেছিলাম। এখন গুগল অনুবাদ কল্পলোক দেখায়। একেবারেই সাম্প্রতিক কোনো বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহারের প্রয়োজন হলে, সেই বিদেশি শব্দটির অনুদিত বাংলা শব্দ চালু করা দরকার।

বাঙালি মধ্যবিত্ত খুব পরিচয় সঙ্কটে ভুগছে, যতদিন আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে না আসবে ততদিন এই ঝামেলা থাকবে। আত্মমর্যাদা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তা বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ই লালন করে না মনে হয়। এরা একেক সময় একেক পরিচয় ধারণ করে, মোগল আমলে ছিল তুর্কি পাঠান মোগল বা আশরাফ, ব্রিটিশ আমলে [কলকাতার] বাবু বা সাহেব, পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তানি এখন আগে বাঙালি না আগে মুসলমান/ হিন্দু। এইসব পরিচয় সংকটের ফলে মধ্যবিত্তের পরিচয় সংক্রান্ত ঝামেলাটি আছে। আর ভাষার লিখিত রূপ তো মধ্যবিত্তেরই।

ফেব্রুয়ারি আসছে। টিফিন ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে আরেকটু কথা বলা যায়। বাঙলায় পেঁটরা, পুটলি, ঝোলা এবং থলেএই চারটা শব্দ ছিলো। এখনকার পোলাপান এই শব্দগুলা একটাও চিনবে বলে মনে হয় না। অথচ এইগুলাকে যদি box বা Carrier-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত তাইলে বাংলা শব্দগুলা বাঁচত। কিন্তু হয়েছে কী তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ইউরোপে Structuralism বলে একটি মতবাদ ১৯৬০-এর দশকে ছিলো। সেটি শব্দগুলোর অর্থ নির্দিষ্ট করে দেয়। আমাদেরও সেরকম বিদেশি শব্দগুলার ক্ষেত্রে দেশি কোন শব্দটা ব্যবহার করা হবে তা ঠিক করে দিয়ে প্রচারমাধ্যমে সেই শব্দগুলা চালু করলেই হবে। বাংলা পরিভাষার জয় হোক।

সোমবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২

সত্য হচ্ছে ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার অনুরূপতা

 


ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার অনুরূপতাই সত্য। এধরনের অনুরূপতা সাধারণত আংশিক ও সন্নিকটবর্তী হয়। কোন সত্যকে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি তা সব সময়েই সত্য আবিষ্কার করার ও তাকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের হাতে যে উপায়গুলি আছে তাদের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু তারই সঙ্গে এই অর্থে আপেক্ষিক হলেও ধ্যান-ধারণার সত্যতা সেই সমস্ত নৈর্বক্তিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে যাদের সঙ্গে ঐ ধ্যান-ধারণার সাদৃশ্য রয়েছে। আমরা কখনোই পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ বা চরম সত্যকে জানতে পারি না, কিন্তু সর্বদা তার দিকেই এগিয়ে চলেছি।

ট্রুথ অর্থে সত্য শব্দটি প্রাচীন দাস যুগ থেকেই আছে। আর সমস্ত চিন্তারই শ্রেণি চরিত্র আছে। আর বিজ্ঞান দাস যুগে ছিলো, সামন্তযুগে পিছিয়ে গেছিল, তখন আলকেমি এবং আরো কিছু ব্যাপার ছিলো, তবে বিজ্ঞান ছিলো না মনে হয়। বিজ্ঞানকে বুর্জোয়ারা পুনরায় বাঁচিয়ে তোলে। মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা বিজ্ঞানকে অধীন করে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের, মাওবাদীরা অধীন করে দ্বন্দ্ববাদের। আর দর্শন হচ্ছে প্রকৃতি-বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ঘনীভূত রূপ। ফলে শুধু বিজ্ঞানের পূজারিরা এখন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক হতে বাধ্য। একটি মজার প্রসঙ্গ, মোহনদাস গান্ধীর মতো পাজীর আত্মজীবনীর নাম মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ

চরম ও আংশিক সত্য

আমরা দেখেছি যে, ধ্যান-ধারণার বিকাশে হরেক রকমের অধ্যাসের যেমন উদ্ভব হয়, তেমনি সত্যেরও আবির্ভাব ঘটে। তাহলে সত্য বস্তুটি কী? এটি হলো ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার মধ্যে অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য।

আমাদের ধ্যান-ধারণা ও বাস্তবতার মধ্যে এই অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য কিন্তু একমাত্র ধীরে ধীরেই প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাও আবার প্রায়শঃই আংশিক ও অসম্পূর্ণ অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্যের বেশি নয়। কারণ, একটি ধারণা বা ভাব সমস্ত দিক থেকেই তার বাস্তব বিষয়ের অনুরূপ নাও হতে পারে, কিন্তু আংশিক অনুরূপ হতে পারে; আবার ঐ বিষয়ে এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে যা ধারণায় আদৌ স্থান পায় না, যার ফলে ধারণা ও তার নৈর্বক্তিক বস্তুর অনুরূপতা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এইসব ক্ষেত্রে অবশ্য একথা আমাদের বলা উচিত নয় যে আমাদের ধারণাটাই ভুল ছিল, কিন্তু তাহলেও তা সর্বাংশে, সম্পূর্ণভাবে চরম সত্য বলে বিবেচিত হবে না। অতএব, সত্য এমন কোনো সম্পত্তি নয় যে একটি ধারণা বা প্রতিজ্ঞা, হয় তার অধিকারী, নয় তো তা নয়; একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই সত্য একটি ধারণার উপাদান হতে পারে।

তথ্যসূত্র

১. মরিস কর্নফোর্থ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, অনুবাদ ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, প্রকাশকাল নভেম্বর ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৫৩২-৫৩৩। 

সাম্যবাদ ও ধর্মের পার্থক্য লেখ



১. সাম্যবাদ ব্যক্তিমালিকানাকে অস্বীকার করে থাকে। কিন্তু সকল ধর্মই সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করে।

২. সাম্যবাদ বলে বস্তুর বিকাশের ফলে চেতনা এসেছে, ধর্ম উল্টোভাবে বলে যে চেতনা থেকে বস্তু এসেছে পরম চেতনা সব বস্তু তৈরি করেছে।

৩. সাম্যবাদ নারী-পুরুষে ভেদ করে না, কিন্তু বেশিরভাগ ধর্ম নারী-পুরুষের সামাজিক-রাজনৈতিকসহ বহু বিভেদ তৈরি করে। কিছু ধর্ম তো নারীকে বুদ্ধিহীন প্রাণী হিসেবেই উপস্থাপন করে।

৪. সাম্যবাদ মুনাফা ও বৈষম্যের বিরোধী, কিন্তু ধর্ম মুনাফার স্বীকৃতি দেয় এবং ধনী-গরিবের বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখে।

৫. সাম্যবাদ বলে, এই পৃথিবীতেই লড়তে হবে, ধর্ম বলে পরকালের আশায় বসে থাকো।

কুসংস্কার এমন বিশ্বাস বা অনুশীলন যা অযৌক্তিক বা অতিপ্রাকৃত বলে বিবেচিত

 


কুসংস্কার (ইংরেজি: Superstition) হচ্ছে এমন কোনো বিশ্বাস বা অনুশীলন যা অ-চর্চাকারীদের দ্বারা অযৌক্তিক বা অতিপ্রাকৃত বলে বিবেচিত হয়, যেটি ভাগ্য বা জাদু, অনুভূত অতিপ্রাকৃত প্রভাব বা অজানা ভয়ের জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভাগ্য, তাবিজ, জ্যোতিষশাস্ত্র, কপাল বলার, আত্মা এবং কিছু অলৌকিক সত্তাকে ঘিরে বিশ্বাস এবং অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ করে এই বিশ্বাস যে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি নির্দিষ্ট (আপাতদৃষ্টিতে) সম্পর্কহীন পূর্বতন ঘটনাগুলির দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে।

এছাড়াও, কুসংস্কার শব্দটি প্রায়শই এমন একটি ধর্মকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যা একটি প্রদত্ত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা অনুশীলন করা হয় না; যদিও সেটা প্রচলিত ধর্ম হিসেবে টিকে থাকে এবং সংখ্যা গরিষ্ঠরা সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে দেখে অথবা ধর্মবিরোধীদের দ্বারা সমস্ত ধর্মের জন্য সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে দেখানো হয়। মধ্যযুগীয় বর্বর ইউরোপে ডাইনি শিকারের ঘটনাগুলি সাধারণত ধর্মীয় কুসংস্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। 

কুসংস্কার হিসাবে বিকল্প ধর্মীয় বিশ্বাস

একটি প্রদত্ত সংস্কৃতিতে সাধারণভাবে গৃহীত ধর্ম থেকে ভিন্ন ধর্মীয় অনুশীলনকে কখনও কখনও কুসংস্কার বলা হয়; একইভাবে, একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আনা নতুন অনুশীলনগুলিকে বাদ দেওয়ার প্রয়াসে নতুন অনুশীলনগুলোকে কুসংস্কার হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। একইভাবে, ভক্তির অত্যধিক প্রদর্শনকে প্রায়ই কুসংস্কারপূর্ণ আচরণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রাচীনকালে, ল্যাটিন superstitio শব্দটি, এর সমতুল্য গ্রীক deisidaimonia শব্দটির মতো, অতিরঞ্জিত আচার এবং ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণ মনোভাবের সাথে যুক্ত ছিল। গ্রীক এবং রোমান বহুঈশ্বরবাদীরা, যারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক শর্তে দেবতার সাথে তাদের সম্পর্কের মডেল তৈরি করেছিল, সেই ব্যক্তিকে তিরস্কার করত যে ক্রমাগত দেবতাদের চিন্তায় ভয়ে কাঁপত, যেমন একজন ক্রীতদাস একজন নিষ্ঠুর এবং খামখেয়ালী প্রভুকে ভয় পায়। দেবতাদের প্রতি এমন ভয়কেই রোমানরা কুসংস্কাররূপে বোঝাত (Veyne 1987, p. 211)দিদেরো তাঁর Encyclopédie-তে কুসংস্কারকে সাধারণভাবে ধর্মের যে কোনো বাড়াবাড়ি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এবং এটিকে বিশেষভাবে পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত করেছিলেন।

কুসংস্কারজীবী প্রসঙ্গে

সমাজে কিছু জীবিকা নির্বাহী মানুষ আছে, যারা কুসংস্কার বিক্রি করে বেঁচে থাকে, যেমন তাবিজ, কবচ, যাদু টোনা, ভুত প্রেত থেকে ঝাড়ফুঁক, এমনকি বন্য প্রাণীর দেহ বা দেহাবশেষ ওষুধ হিসেবে বিক্রি করে। এরাই মূলত কুসংস্কারজীবি। পরিস্থিতির জটিলতায় হয়ত এরা এমন জীবনে এসেছেন, এরা লুম্পেন অনেকটা আর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পুরোটা। মানবতাবাদ শুধু মানুষের মঙ্গল দেখেছে, ফলে মানবতাবাদীর কাছে পণ্য বা মুনাফা খারাপ কিছু নয়। ফলে মানবতাবাদীরা যে কোনো ব্যবসাকেই বৈধ বলে। সেটি যত বিপন্ন প্রাণীর ব্যবসাই হোক না কেন, সেই ব্যবসাও তারা চালাতে চায়।

সামন্তবাদ আর কুসংস্কারের সম্পর্ক একটি আঠালো সম্পর্ক। ফলে একজন কুসংস্কারজীবী কোনোভাবেই সমাজের কাজে লাগে না, কুসংস্কারজীবীরা কলা বা ঝালমুড়ি বেচেও জীবনধারণ করতে পারে।

রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

স্মৃতিময় সিটিসেল

সিটিসেল


সিটিসেল নামে ব্যবসা করেছে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মোবাইল অপারেটর। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ও দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগামী টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক কোম্পানি যা শ্রীলঙ্কার ইতিসালাত ও পাকিস্তানের পাকটেলের মতোই বাংলাদেশে প্রথমে ব্যবসা আরম্ভ করে। এটি দেশের একমাত্র মোবাইল অপারেটর যা সিডিএমএ এবং ইভিডিও প্রযুক্তি ব্যবহার করত। আগস্ট ২০১৬ পর্যন্ত সিটিসেলের মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার।

আমার ব্যক্তিগত জীবনের একটি অংশ জুড়ে আছে এই সিটিসেল। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ছাইরঙা ছোট এন্টিনার সেট কিনে সিটিসেলের গ্রাহক হই। সেইটিতে যে রিম ছিলো তা পোস্টপেইড। যখন গেঁড়ামিন নামক বাটপার অপারেটরটায় সাত টাকা মিনিট কথা বলতে হতো তখন আমি কথা বলতাম সাড়ে তিন টাকায়। ফলে তখন কথা বলেছি অনেক, আমার সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনের ৫০০-৭০০ টাকা চলে যেত কথা বলতে। আমার কলিগ পর্যন্ত আমার সেই সিটিসেলেই কথা বলতো। তাঁর যুক্তি ছিলো আমারটায় কম রেট!

আমি সিটিসেল কিনেছিলাম তাঁর কারণ আমার বড় ভাইয়ের প্রথম সেটটিও সিটিসেল ছিলো। তাঁর সেটটিতে কোনো রিম ছিলো না। ভাইয়ের ফোনটির দাম ছিলো প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরপর বিভিন্ন সময় সিটিসেলের কলরেট কমতে থাকে। কমতে কমতে একসময় সিটিসেল টু সিটিসেল ২৯ পয়সা মিনিটে এসে থামে। যাদের সাথে বেশি কথা বলতে হয় তাঁদেরকে আমি একটি করে ৯৯০ টাকার সেট গিফট করতে থাকি। এরকমভাবে আমাদের পুরো পরিবার হয়ে যায় সিটিসেল পরিবার।

সিটিসেল দিয়ে তারুণ্যের উত্তাল দিনগুলোতে পেয়েছি বন্ধুত্ব, প্রেম, মুগ্ধতা। এই সিটিসেলে কথা বলেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার পরমাত্মীয়টিকে। পুরনো সিটিসেল বন্ধ হওয়া তাই ছিলো আনন্দ-বেদনার সাথে জড়িয়ে।

নির্মলেন্দু গুণ মোবাইলের বার্তা বক্সে লিখেছিলেন মুঠোফোনের কাব্য, আর আমি লিখেছিলাম প্রায় ৩০০টি প্রেমবার্তা। তখন দশ-বিশ মিনিটে চার-পাঁচ লাইনের কবিতা লিখে ফেলতাম

সিটিসেল বন্ধ হলো যেদিন মহামহিম তাঁড়ানা আপা আঙ্গুলের ছাপ্পা নিতে শুরু করলেন। আমরা আর কেউই সিটিসেলের জন্য ছাপ্পা দিলাম না। তখনো দেখি পরিবারের একজন সদস্য সিটিসেলটির জন্য ছাপ্পা দিয়েছেন।

সবাই সিটিসেল বর্জন করলেও আমি শেষ পর্যন্ত বর্জন করতে পারিনি। বাটপার গেঁড়ামিন আমি জীবনে একবছরও ব্যবহার করতে পারিনি। আর বদমাশ বাংলালিংক ব্যবহার করতাম বিকল্প নম্বর হিসেবে। পকেটে একটি সিটিসেল সেট রাখতাম ২০১৫ সালেও। আর সিটিসেল সস্তায় যে ইন্টারনেট সেবা দিত তা কখনই ভুলবার নয়।

সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

ভ্লাদিমির লেনিনের পুস্তক-আলোচনা ও লেনিনবাদের রূপ


মার্কসবাদী শ্রেণিসংগ্রামের স্বীকৃতিকে প্রসারিত করে প্রলেতারীয় একনায়কত্বের স্বীকৃতিতে
কী করতে হবে? আমাদের আন্দোলনের জরুরি প্রশ্নগুলি, (ইংরেজিতে: What Is to Be Done? Burning Questions of Our Movement) হচ্ছে লেনিনের লেখা বই যা ১৯০১ সালে লিখিত এবং ১৯০২ সালে প্রকাশিত এটি একটি রাজনৈতিক প্রচারপুস্তিকা যার শিরোনাম নেয়া হয় উনিশ শতকের রুশ বিপ্লবী নিকোলাই চেরনিশেভস্কি (১৮২৮-৮৯) লিখিত একই নামের উপন্যাস থেকে। পার্টি গঠনে এই বইয়ের ভূমিকা ছিল বিশাল। এতে তিনি প্রলেতারিয় মার্কসবাদী পার্টি গঠনের পরিকল্পনা ও তার রণকৌশলের বুনিয়াদ বিশদভাবে উপস্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন। লেনিনের মত ছিলো এপার্টিকে হতে হবে আগাগোড়া বিপ্লবী, নতুন ধরনের সংগ্রামী পার্টি। এই বইখানি ‘অর্থনীতিবাদের’ ভাবাদর্শগত গোরখোদকের কাজ সুসম্পন্ন করে। 
এক পা আগে, দুই পা পিছে হচ্ছে লেনিন লিখিত ১৯০৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এমন একটি বই যেখানে তিনি মেনশেভিকদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে নামা এবং পার্টির পক্ষে, রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনের পক্ষে মেনশেভিকবাদের বিপদসমূহকে বিশ্লেষণ করে দেখান। এতে লেনিন পার্টি জীবনের কঠোর মান ও পার্টি পরিচালনার নীতি রচনা করেন। এতে ছিলো পার্টির সব সদস্যের দ্বারা কঠোরভাবে নিয়মসমূহ পালন, একক পার্টি শৃঙ্খলা, সংখ্যাগুরুর কাছে সংখ্যাল্পের ও উচ্চতর সংগঠনের কাছে নিম্নতর সংগঠনের কাছে নতি স্বীকার, পার্টি সংস্থাগুলির নির্বাচন ও জবাবদিহির বাধ্যতা, পার্টি সদস্যগণের সক্রিয়তা, আত্মউদ্যোগ ও আত্মসমালোচনার বিকাশ।   
গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল (১৯০৫) লেনিন লেখেন ১৯০৫ সালের জুন-জুলাই মাসে এবং বইটি বের হয় জেনেভা থেকে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্করণে; তখন লেনিন সেখানে থাকতেন এবং কাজ করতেন। সেই ১৯০৫ সালেই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক এবং আলাদাভাবে মস্কো কমিটি কর্তৃক দশ হাজার সংখ্যায় বইখানা আবার পুনর্মুদ্রিত হয়। ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিটার্সবুর্গ প্রেস কমিটি বইখানায় প্রকাশিত ভাব-ভাবনাকে জার সরকারের বিরোধী অপরাধজনক কার্য বিবেচনা করে সেটিকে নিষিদ্ধ করেছিল এই বইয়ে লেনিন দেখান সশস্ত্র অভ্যুত্থান হচ্ছে জারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের নির্ধারক উপায়। প্রলেতারিয়েত ও কৃষকসম্প্রদায়ের ক্ষমতা অর্থাৎ বিপ্লবী গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব কায়েম করতে হবে; আগের বিপ্লবগুলোতে যা হয়েছে সেভাবে বিজয়ী অভ্যুত্থান থেকে বুর্জোয়ার ক্ষমতা স্থাপন চলবে না। অথচ মেনশেভিকরা মনে করত ক্ষমতা নেবে বুর্জোয়ারা, শ্রমিক শ্রেণির কর্তব্য হলও তাদের সমর্থন করা।  
বস্তুবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদী সমালোচনা (ইংরেজিতে: Materialism and Empirio-Criticism) লেনিন লেখেন ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি-অক্টোবর মাসে যেখানে তিনি মার্কসবাদী দর্শনের বিরোধীদের স্বরূপ উদঘাটন করেন। তিনি এই গ্রন্থে আরো দেখান যে দর্শন ও রাজনীতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বর্তমান।
জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের আধিকার, ইংরেজিতে “The Right of Nations to Self-Determination, হচ্ছে লেনিনের ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মে মাসে লিখিত এবং এপ্রিল-জুন মাসে Prosveshcheniye জার্নালে প্রকাশিত প্রকাশিত একটি রাজনৈতিক প্রচারপুস্তিকা। এই প্রচারপুস্তকে এবং ‘জাতীয় সমস্যায় সমালোচনামূলক মন্তব্য’ নিবন্ধে লেনিন জাতীয় প্রশ্নের মার্কসবাদী কর্মসূচি এবং বলশেভিক পার্টির জাতীয় নীতি বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন।
সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়  (ইংরেজিতে: Imperialism, The Highest Stage of Capitalism) হচ্ছে ১৯১৬ সালের জানুয়ারি-জুন মাসে  লেনিনের লিখিত বই যেটি তিনি লেখেন জুরিখে বসে পারুসপ্রকাশালয়ের জন্য। এই গ্রন্থে লেনিন দেখালেন যে বিশ শতকের শুরু নাগাদ পুঁজিবাদ তার বিকাশের নতুন পর্বে, সাম্রাজ্যবাদের পর্বে প্রবেশ করেছে।
রাষ্ট্র ও বিপ্লব (ইংরেজিতে: The State and Revolution) হচ্ছে ১৯১৭ সালের লেনিন লিখিত এমন আরেকটি বই যেখানে সমাজে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিপ্লব অর্জনে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পথে সমাজ গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক অপর্যাপ্ততার বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থকে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের ওপরে লেনিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে এবং লুসিও কোলেত্তি এটিকে বলেছেন “রাজনৈতিক তত্ত্বে লেনিনের মহত্তম অবদান” মার্কসবাদী তাত্ত্বিক David McLellan-এর মতানুসারে, the book had its origin in Lenin's argument with Bukharin in the summer of 1916 over the existence of the state after a proletarian revolution. Bukharin had emphasised the 'withering' aspect, whereas Lenin insisted on the necessity of the state machinery to expropriate the expropriators. In fact, it was Lenin who changed his mind, and many of the ideas of State and Revolution, composed in the summer of 1917 - and particularly the anti-Statist theme - were those of Bukharin.  
প্রলেতারিয় বিপ্লব ও দলদ্রোহী কাউৎস্কি হচ্ছে ১৯১৮ সালের অক্টোবরে লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি সুবিধাবাদের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানেন। বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে বিশুদ্ধ ও শ্রেণিবহির্ভূতবলে দেখাবার যে চেষ্টা কাউৎস্কি করেছিলেন, এ পুস্তকে লেনিন তার অযৌক্তিকতা খুলে দেখান
কমিউনিজমে ‘বামপন্থা’র শিশু রোগ হচ্ছে ১৯২০ সালে লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি বলশেভিক পার্টির সৃষ্টি, বিকাশ, সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন১৯০৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বলশেভিকবাদের ব্যবহারিক কাজের ইতিহাসের নানান ধরন সম্পর্কে লিখেছেন। অর্থাৎ রুশদেশে লেনিনের বিপ্লবী নীতি ও কৌশলের নানা রূপ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির কর্তব্যের নানা দিক ব্যাখ্যাত হয় এই গ্রন্থে। লেনিনবাদি কৌশল বলতে আজ আমরা যা বুঝি তার রূপ রয়েছে এই বইতে।
তথ্যসূত্র:
১. এই নিবন্ধের প্রায় সব তথ্যই গ. দ. অবিচকিন ও অন্যান্য; ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, সংক্ষিপ্ত জীবনী; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭১ থেকে নেয়া হয়েছে
২. ভি. আই. লেনিন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-১৩৫।
৩. ভি. আই. লেনিন, সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদীদের প্রসঙ্গে; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; তারিখহীন; পৃষ্ঠা-১৯১।
৪. L. Colletti, From Rosseau to Lenin (London and New York, 1972, p.224)
৫. David Mclellan Marxism after Marx, 1979, New York: Harper and Row, p.98. For Lenin's considerable debt to Bukharin, see S. Cohen Bukharin and the Bolshevik Revolution (New York, 1973, pp.25ff; 39ff)

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৩

রাষ্ট্র হলো শ্রেণি-আধিপত্যের সংস্থা



রাষ্ট্রঃ মার্কসের মতে রাষ্ট্র হলো শ্রেণি-আধিপত্যের সংস্থা, এক শ্রেণি কর্তৃক অপর শ্রেণি পীড়নের সংস্থা, রাষ্ট্র হলো এমন শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা, যাতে শ্রেণি সংঘাত নরম করে এই পীড়নকে বিধিবদ্ধ ও কায়েম করেরাষ্ট্র হলো শ্রেণি-বিরোধের অমিমাংসেয়তার ফল ও অভিব্যক্তি।[১]  
রাষ্ট্র এক শ্রেণি কর্তৃক অপর শ্রেণিকে দমনের যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়, এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে সেটা রাজতন্ত্রের চেয়ে একছিটে কম নয়।[২] 

শোষকেরা রাষ্ট্রকে অনিবার্যরূপেই শোষিতদের উপর তাদের শ্রেণির তথা শোষকদের শাসনের এক যন্ত্রে রূপান্তরিত করেতাই সংখ্যাধিক্যের তথা শোষিতদের উপর শাসন পরিচালনাকারী শোষকেরা যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও অনিবার্যরূপে অবশ্যই হবে শোষকদের গণতন্ত্রএরূপ রাষ্ট্র থেকে শোষিতদের রাষ্ট্র অবশ্যই মৌলিকভাবে হবে ভিন্ন; সেটা অবশ্যই হবে শোষিতদের গণতন্ত্র, এবং শোষকদের দাবিয়ে রাখার যন্ত্র; আর কোনো শ্রেণিকে দাবিয়ে রাখার অর্থ সেই শ্রেণির প্রতি অ-সমান ব্যবহার, গণতন্ত্র থেকে তার বহিষ্কার।[৩]  

তথ্যসূত্রঃ
. লেনিন; রাষ্ট্র ও বিপ্লব; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; পৃষ্ঠা-৯
. লেনিন; রাষ্ট্র ও বিপ্লব; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; পৃষ্ঠা-৭৯
. লেনিন; সর্বহারা বিপ্লব ও দলদ্রোহি কাউতস্কি; গণপ্রকাশন, ঢাকা; পৃষ্ঠা ৩৩ ডিসেম্বর, ১৯৯০

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...