রবিবার, এপ্রিল ২২, ২০১২

বাংলাদেশে যতভাবে পাখি শিকার করা হয়


পাখি রক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের একটি প্রচারণা
বাংলাদেশে নানাভাবে পাখি শিকার করা হয়। পাখি শিকার আজকাল যতটা না বন্দুক দিয়ে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয় ফাঁদ পেতেলোকেরা শুধু যে শখ করে শিকার করে তা নয়, একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি পেশাদার শিকারির দলসেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত ব্যাপক হারে চলে এই পাখি শিকারশিকারীরা বাজার গড়ে তুলেছে বিক্রির জন্য। গোপন প্রকাশ্য দুভাবেই পাখি বিক্রি হয়। সিলেট অঞ্চলের হোটেলে শীত মৌসুমে পাখির মাংস অনেক হোটেলে পাওয়া যায়। দিনাজপুর শহরের দুতিনটি হোটেলে সারা বছরই বিক্রি হয় পাখির মাংস। 
আইনত নিষিদ্ধ হলেও সারা দেশেই চলে শিকারশীতের মৌসুমে অমাবস্যার সময় পাখি বেশি ধরা পড়েকারণ জলাশয়ে পাখিরা নামে অনেকটা উড়োজাহাজের মতোআর নামার সময় ফাঁদে আটকে যায় গলা কিংবা পাবিলের শত শত একরজুড়ে ফাঁদ পেতে, জাল টানিয়ে, নিশানা উড়িয়ে তৈরি করা হয় শিকারের এলাকা বাগেরহাটে এগুলোকে বলে 'গগা'নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাখিশিকারে ব্যবহার করা হয় সুতোর ফাঁস, কারেন্ট জাল, নেট জাল, বাঁশি ফাঁদ, উড়ো ফাঁদসিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ভোলা, বরিশালে ব্যবহার করা হয় বিষটোপফাঁদ, জাল বিষটোপে বেশি মারা পড়ে পাতি সরালি (Lesser Whistling Duck), বেগুনি কালিম (Purple Swamphen), উত্তুরে খুন্তেহাঁস (Northern Shoveler), উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস (Northern Pintail), ধলা বালি হাঁস (Cotton Pigmy Goose), দেশি মেটে হাঁস (Indian Spot-billed Duck), ছোটডুবুরি (Little Greebe), পাতিকুট (Eurasian Coot), ধলাবুক ডাহুক (White-breasted Waterhen), নাটা গুলিন্দা (Whimbrel), ছোট পানকৌড়ি (Little Cormorant), পাতি চ্যাগা (Common Snipe), ল্যাঞ্জা চ্যাগা (Pin-tailed Snipe), কোড়া(Watercock), মেটে রাজহাঁস (Greylag Goose)ইত্যাদি
এছাড়া গ্রামে কিছু মানুষ পোষে টিয়া ও ঘুঘু। পোষা ঘুঘু ও টিয়া দিয়ে বন্য ঘুঘু ও টিয়া শিকার করা যায়। একইভাবে  পোষা কোড়া দিয়ে বন্য কোড়া(Watercock) শিকার করা যায়। বড়শি দিয়ে শিকার করা যায় পান্তা ঝিল্লি (Water Rail)। আমাদের বাংলাদেশে Ardeidae পরিবারের যে ১৯ প্রজাতির বক পাওয়া যায় তার সব কটির মাংস বাংলাদেশের মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই বকগুলির মধ্যে ছোট বগা (Little Egret) ও দেশি কানিবক (Indian Pond Heron) প্রায় গ্রামেই একসময় পাওয়া যেত। এই বক দুটোকে ফাঁদ পেতে ধরেই গ্রাম বাসিরা শেষ করে ফেললো। ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা অঞ্চলে ছোট আকারের গোপন ঘরের ছাদে একটি বন্দি বক রেখে ঘরটির মধ্যে মানুষ লুকিয়ে থাকে। বন্দি বকটির পাশে অন্য বক এসে বসলে হাত দিয়েই বক শিকার করা যায়। 
পাখি শিকার বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশসহ পৃথিবী অবিলম্বেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই পাখি বাঁচাতে হবে।  

পাখি বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পড়ুন আরো একটি নিবন্ধঃ বাংলাদেশের পাখি, বাংলাদেশের প্রাণ, পাখি বাঁচান, বাংলাদেশকে বাঁচান
পাখি কীভাবে বাড়াতে হবে তা জানতে পড়ুনঃ পাখি বাড়াতে করণীয়

শুক্রবার, এপ্রিল ২০, ২০১২

কালা ফিঙে বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি


কালা ফিঙে, ফটোঃ আর এইচ খান, বাংলাদেশ।

দ্বিপদ নাম: Dicrurus macrocercus 
বাংলা নাম: কালা ফিঙে  
ইংরেজি নাম/Common Name: Black Drongo.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
পরিবার/Family: Corvidae
গণ/Genus: Dicrurus, Vieillot, 1816.
প্রজাতি/Species: Dicrurus macrocercus, Vieillot, 1817.
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকাDicrurus গণে পৃথিবীতে  ২৩টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার টি প্রজাতি। সেগুলো হলও ১. ব্রঞ্জ ফিঙে, ২. কাকঠুটোঁ ফিঙে, ৩. কেশরী ফিঙে, ৪. মেটে ফিঙে, ৫. কালা ফিঙে ৬. বড় রেকেটফিঙে এবং ৭. ছোট রেকেটফিঙেআমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম কালা ফিঙে
পরিচিতি: কালা ফিঙে লম্বা চেরা লেজ ও কালোদেহের পোকা শিকারি পাখিদৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওজন ৪৫ গ্রাম, ডানা ১৪ সেমি, ঠোঁট ২.৫ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৯.৫ সেমি
স্বভাব: কালা ফিঙে অপ্রধান বন, জলাভূমি, মাঠ ও লোকালয়ে বিচরণ করে; সচরাচর একা, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে  
বিস্তৃতি: কালা ফিঙে বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখিসব বিভাগের সর্বত্র পাওয়া যায়
অবস্থা: কালা ফিঙে বিশ্ব ও বাংলাদেশে বিপদ মুক্ত বলে বিবেচিত

আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা 

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

বুধবার, এপ্রিল ১৮, ২০১২

শঙ্খচিল বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি

Photo: Kiron Khan, Bangladesh.
বৈজ্ঞানিক নাম: Haliastur Indus
সমনাম: Falco Indus (Boddaert, 1783) 
বাংলা নাম: শঙ্খচিল,
ইংরেজি নাম: Brahiminy Kite.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
বর্গ: Falconiformes
পরিবার: Accipitridae
গণ: Haliastur Selby, 1840
প্রজাতি: Haliastur Indus (Boddaert, 1783)
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকাHaliastur গণে পৃথিবীতে  ২টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার টি প্রজাতি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম শঙ্খচিল
পরিচিতি: শঙ্খচিল বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দাঋতুর পরিবর্তনে এরা স্থান পরিবর্তন করেএরা মাছ, ব্যাং , কাঁকড়া , সাপ ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করেদেহ মরিচা লালচে বর্নেরডানার অগ্রভাগ কালচেস্ত্রী ও পুরুষ পাখি দৃশ্যত অভিন্নপ্রজনন ঋতু মার্চ ও এপ্রিলের মাঝামাঝিসাধারণত গাছের উচু ডাঁলে বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে
মন্তব্য: বর্তমানে ক্ষেতে খামারে ব্যবহৃত কীটনাশক এর কারনে শঙ্খচিল এর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছেফলে শঙ্খচিল বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে এবং এর ফলে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছেতাই পরিবেশ রক্ষার্থে শঙ্খচিল বাঁচাতে হবে 
বিবিধ: পৃথিবীতে Accipitridae পরিবারে ৬৬টি গণে রয়েছে ২৩৮টি প্রজাতি এবং বাংলাদেশে ২১টি গণে রয়েছে ৪৩টি প্রজাতি।

আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা 

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

৪. বাংলাদেশের ফলবৈচিত্র্যের একটি বিস্তারিত পাঠ

বুধবার, এপ্রিল ১১, ২০১২

ইউরেশিয় গৃধিনী বাংলাদেশের মহাবিপন্ন পাখি

Photo: Kiron Khan, Bangladesh. Feb 2012.



বাংলা নাম: ইউরেশিয় গৃধিনী; গ্রিফন শকুন।
বৈজ্ঞানিক নাম/Scientific Name: Gyps fulvus (Hablizl, 1783)
সমনাম: Vultur fulvus Hablizl, 1783
ইংরেজি নাম/Common Name:  Griffon Vulture. 

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia
বিভাগ/Phylum: Chordata
শ্রেণী/Class: Aves
পরিবার/Family: Accipitridae
গণ/Genus: Gyps, Savigny, 1809; 
প্রজাতি/Species Name: Gyps fulvus (Hablizl, 1783)  
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকাGyps গণে পৃথিবীতে  প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার প্রজাতি। সেগুলো হলো ১. বাংলা শকুন, ২. ইউরেশীয় গৃধিনী, ৩. হিমালয়ী গৃধিনী ও ৪. সরুঠুঁটি শকুন। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম ইউরেশিয় গৃধিনী
বর্ণনাঃ ইউরেশিয় গৃধিনী বা গ্রিফন শকুন খুব বড় ডানার অতিকায় পাখি। এর দৈর্ঘ্য ১১৫ সেমি, ওজন ৭ কেজি, ডানা ৭০ সেমি, ঠোঁট ৭.২ সেমি, পা ১১ সেমি, লেজ ৩১.৬ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির লালচে-বাদামি পালকের জন্য একে হজে অন্য শকুন থেকে আলাদা করা যায়।
বিস্তৃতিঃ ইউরেশিয় গৃধিনী বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি। শীত মৌসুমে সিলেট বিভাগের আবাদি এলাকায় পাওয়া যায়। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, তুরস্ক ও আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থাঃ ইউরেশিয় গৃধিনী বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশে মহাবিপন্নরূপে বিবেচিত।
ইউরেশিয় গৃধিনীর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলদে-বাদামি শকুন।
ছবির ইতিহাসঃ ছবিটি তুলেছেন কিরণ খান, ফেব্রূয়ারি ২০১২-তে বাইক্কা বিল, মৌলভীবাজার, বাংলাদেশ থেকে।
দেখার ইতিহাসঃ গ্রিফন শকুন দেখা গেছে ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তে মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে। দেখেছিলেন এবং ছবি তুলেছিলেন জালাল আহমেদ। এছাড়াও একটি ইউরেশিয় গৃধিনী ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তে দেখা গেছে ঠাকুরগায়ে। ছবিটি দেখুন ফেসবুকের এই লিঙ্কে।   

In11-01-2012, a group of seven Griffon Vulture took shelter on a rain tree behind the architecture faculty of
Bangladesh University of engineering and Technology (BUET), Dhaka, Bangladesh. One of them was chased down to ground by crows. Later on a group of architecture students rescued the bird and released it. Himalayan Griffon in BUET campus is not a regular roosting spot. Perhaps they just made a stopover at the time of Migration.

এ সংক্রান্ত আরো পড়ুনঃ

আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা 

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

৪. বাংলাদেশের ফলবৈচিত্র্যের একটি বিস্তারিত পাঠ

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...