মার্কসবাদী শ্রেণিসংগ্রামের স্বীকৃতিকে প্রসারিত করে প্রলেতারীয় একনায়কত্বের স্বীকৃতিতে |
এক পা আগে, দুই পা পিছে হচ্ছে লেনিন লিখিত ১৯০৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এমন একটি
বই যেখানে তিনি মেনশেভিকদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে নামা এবং পার্টির পক্ষে, রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনের পক্ষে মেনশেভিকবাদের
বিপদসমূহকে বিশ্লেষণ করে দেখান। এতে লেনিন পার্টি জীবনের কঠোর মান ও পার্টি
পরিচালনার নীতি রচনা করেন। এতে ছিলো পার্টির সব সদস্যের দ্বারা কঠোরভাবে নিয়মসমূহ
পালন, একক পার্টি শৃঙ্খলা, সংখ্যাগুরুর কাছে সংখ্যাল্পের ও উচ্চতর সংগঠনের কাছে
নিম্নতর সংগঠনের কাছে নতি স্বীকার, পার্টি সংস্থাগুলির নির্বাচন ও জবাবদিহির
বাধ্যতা, পার্টি সদস্যগণের সক্রিয়তা, আত্মউদ্যোগ ও আত্মসমালোচনার বিকাশ।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল (১৯০৫) লেনিন লেখেন ১৯০৫ সালের জুন-জুলাই মাসে এবং বইটি
বের হয় জেনেভা থেকে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির
সংস্করণে; তখন লেনিন সেখানে থাকতেন এবং কাজ করতেন। সেই
১৯০৫ সালেই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক এবং আলাদাভাবে মস্কো কমিটি কর্তৃক দশ
হাজার সংখ্যায় বইখানা আবার পুনর্মুদ্রিত হয়। ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে
পিটার্সবুর্গ প্রেস কমিটি বইখানায় প্রকাশিত ভাব-ভাবনাকে জার সরকারের বিরোধী
অপরাধজনক কার্য বিবেচনা করে সেটিকে নিষিদ্ধ করেছিল।২ এই বইয়ে লেনিন দেখান সশস্ত্র অভ্যুত্থান হচ্ছে জারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র
উচ্ছেদের নির্ধারক উপায়। প্রলেতারিয়েত ও কৃষকসম্প্রদায়ের ক্ষমতা অর্থাৎ বিপ্লবী
গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব কায়েম করতে হবে; আগের বিপ্লবগুলোতে যা হয়েছে সেভাবে বিজয়ী
অভ্যুত্থান থেকে বুর্জোয়ার ক্ষমতা স্থাপন চলবে না। অথচ মেনশেভিকরা মনে করত ক্ষমতা
নেবে বুর্জোয়ারা, শ্রমিক শ্রেণির কর্তব্য হলও তাদের সমর্থন করা।
বস্তুবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদী সমালোচনা (ইংরেজিতে: Materialism and
Empirio-Criticism) লেনিন লেখেন ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি-অক্টোবর
মাসে যেখানে তিনি মার্কসবাদী দর্শনের বিরোধীদের স্বরূপ উদঘাটন করেন। তিনি এই
গ্রন্থে আরো দেখান যে দর্শন ও রাজনীতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বর্তমান।
জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের আধিকার, ইংরেজিতে “The Right of Nations to
Self-Determination”, হচ্ছে লেনিনের
১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মে মাসে লিখিত এবং এপ্রিল-জুন মাসে Prosveshcheniye
জার্নালে প্রকাশিত প্রকাশিত একটি রাজনৈতিক প্রচারপুস্তিকা। এই
প্রচারপুস্তকে এবং ‘জাতীয় সমস্যায় সমালোচনামূলক মন্তব্য’ নিবন্ধে লেনিন জাতীয়
প্রশ্নের মার্কসবাদী কর্মসূচি এবং বলশেভিক পার্টির জাতীয় নীতি বিকশিত ও
প্রতিষ্ঠিত করেন।
সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের
সর্বোচ্চ পর্যায় (ইংরেজিতে: Imperialism, The
Highest Stage of Capitalism) হচ্ছে ১৯১৬ সালের জানুয়ারি-জুন
মাসে লেনিনের লিখিত বই যেটি তিনি লেখেন
জুরিখে বসে ‘পারুস’ প্রকাশালয়ের
জন্য।৩ এই গ্রন্থে লেনিন দেখালেন যে বিশ শতকের শুরু নাগাদ পুঁজিবাদ তার
বিকাশের নতুন পর্বে, সাম্রাজ্যবাদের পর্বে প্রবেশ করেছে।
রাষ্ট্র ও বিপ্লব (ইংরেজিতে: The State and Revolution) হচ্ছে ১৯১৭ সালের লেনিন
লিখিত এমন আরেকটি বই যেখানে সমাজে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিপ্লব অর্জনে প্রলেতারিয়েতের
একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পথে সমাজ গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক অপর্যাপ্ততার বর্ণনা করা
হয়েছে। রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থকে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের ওপরে লেনিনের
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে এবং লুসিও কোলেত্তি এটিকে বলেছেন “রাজনৈতিক
তত্ত্বে লেনিনের মহত্তম অবদান”।৪ মার্কসবাদী
তাত্ত্বিক David McLellan-এর মতানুসারে,
“the book had its origin in Lenin's argument with
Bukharin in the summer of 1916 over the existence of
the state after a proletarian revolution. Bukharin had emphasised the
'withering' aspect, whereas Lenin insisted on the necessity of the state
machinery to expropriate the expropriators. In fact, it was Lenin who changed
his mind, and many of the ideas of State and Revolution, composed in the summer
of 1917 - and particularly the anti-Statist theme -
were those of Bukharin.”৫
প্রলেতারিয় বিপ্লব ও দলদ্রোহী কাউৎস্কি হচ্ছে ১৯১৮ সালের অক্টোবরে লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি সুবিধাবাদের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানেন। বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে ‘বিশুদ্ধ ও শ্রেণিবহির্ভূত’ বলে দেখাবার যে চেষ্টা কাউৎস্কি করেছিলেন, এ পুস্তকে লেনিন তার অযৌক্তিকতা খুলে দেখান।
কমিউনিজমে
‘বামপন্থা’র শিশু রোগ হচ্ছে ১৯২০ সালে
লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি বলশেভিক পার্টির সৃষ্টি, বিকাশ, সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন। ১৯০৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বলশেভিকবাদের ব্যবহারিক কাজের ইতিহাসের নানান ধরন সম্পর্কে লিখেছেন। অর্থাৎ রুশদেশে লেনিনের
বিপ্লবী নীতি ও কৌশলের নানা রূপ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির
কর্তব্যের নানা দিক ব্যাখ্যাত হয় এই গ্রন্থে। লেনিনবাদি কৌশল বলতে আজ আমরা যা বুঝি
তার রূপ রয়েছে এই বইতে।
তথ্যসূত্র:
১. এই নিবন্ধের প্রায় সব তথ্যই গ. দ. অবিচকিন ও
অন্যান্য; ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, সংক্ষিপ্ত জীবনী; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭১ থেকে নেয়া হয়েছে।
২. ভি. আই. লেনিন, গণতান্ত্রিক
বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল; প্রগতি প্রকাশন,
মস্কো; ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-১৩৫।
৩. ভি. আই. লেনিন, সাম্রাজ্যবাদ এবং
সাম্রাজ্যবাদীদের প্রসঙ্গে; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; তারিখহীন; পৃষ্ঠা-১৯১।
৪. L. Colletti, From
Rosseau to Lenin (London and New York, 1972, p.224)
৫. David Mclellan
Marxism after Marx, 1979, New York: Harper and Row, p.98. For Lenin's considerable debt to Bukharin, see S. Cohen
Bukharin and the Bolshevik Revolution (New York, 1973,
pp.25ff; 39ff)