বুধবার, মে ৩০, ২০১২

ছোট বগা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি




ছোট বগা, ফটো: ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে
দ্বিপদ নাম/Scientific Name: Egretta garzetta
সমনাম: Ardea garzetta, Linnaeus, 1766 
বাংলা নাম: ছোট বগা, ছোট করচে বক(আলী)
ইংরেজি নাম/Common Name: Little Egret.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
পরিবার/Family: Ardeidae
গণ/Genus: Egretta, Forster, 1817;
প্রজাতি/Species Name: Egretta garzetta Linnaeus, 1766
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকাEgretta গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি তিনটি হলো ছোট বগা, মাঝলা বগা ও প্রশান্ত শৈলবগা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে ছোট বগা
বর্ণনা: ছোট বগা কালো ঠোঁট, কালো পা ও হলদে আঙুলওয়ালা সাদা জলচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ৬৩ সেমি,  ওজন ৩৯০ গ্রাম, ডানা ২৮ সেমি, ঠোঁট ৮.৫ সেমি, পা ১০.৪ সেমি, লেজ ১০ সেমি। আকারে মেয়ের চেয়ে ছেলেপেখি সামান্য বড়। ৩টি উপপ্রজাতির মধ্যে E. g. garzetta বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: ছোট বগা বিল, হ্রদ, নদী, জলাধার, খাল, প্যারাবন, প্লাবনভূমি, খোলা বন ও ধানখেতে বিচরণ করে; সচরাচর বগা ও বকের মিশ্র দলে থাকে।
বিস্তৃতি: ছোট বগা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সব বিভাগের সব জলাশয়ে পাওয়া যায়। ইউরোপ, আফ্রিকা, পুরোভারত উপমহাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইনসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে ও বিশ্বে বিপদমুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিধ: Egretta এই গণে পৃথিবীতে  ১৪ প্রাজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার তিনটি প্রাজাতি। সেগুলো হলো আমাদের আলোচ্য ছোট বগা, মাঝলা বগা ও প্রশান্ত শৈলবগা।

আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা 

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

৪. বাংলাদেশের ফলবৈচিত্র্যের একটি বিস্তারিত পাঠ

সোমবার, মে ০৭, ২০১২

রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা








নানা রঙে নানা ধারায় ছড়িয়ে পড়া এক কবি রবীন্দ্রনাথ (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮_২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮)। তিনি বাঙালিকে ভালোবেসেছিলেন তাদেরকে বদলানোর উদ্দেশ্যে। রবিন্দ্রভাবনার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাঙালি ও তার ভাষা। বাঙালির প্রাণে আলো জ্বালানো এই মানুষটি ইউরোপিয় রেনেসাঁ ও আলোকায়নের যুগ দ্বারা প্রভাবিত। তাঁর জীবনকাল পুঁজিবাদের বিকাশের শেষ পর্যায় এবং সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের কাল। ভারতবর্ষের পরাধীনতার কালেও যে মানুষটি গণতন্ত্রের উদার ভাবাদর্শে এবং ইউরোপিয় সভ্যতার প্রতি আস্থাশীল।

পুরোপুরি যুক্তিতাড়িত না হলেও এই কবি আবেগের প্রাবল্যে ভেসে যাননি। রাজনিতিক না হয়েও রাজনীতি বিষয়ে সারা জীবন লিখেছেন এবং রাজনিতিক চিন্তায় ও বিশ্লেষণে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। যদিও তিনি বিপ্লবী ছিলেন না

বাঙালি ত্রুটিগুলোকে তিনি ঘৃণা করতেনতিনি সর্বদাই চেয়েছেন বাঙালি তার মহত্ত নিয়ে বিকশিত ও প্রকাশিত হোক। বাঙালি এক হোক তার শক্তি দিয়ে। তাই তিনি লিখতে পারেন,
আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি তাহ পালন করি না; ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা করিতে পারি, তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতালাভের চেষ্টা করি না; আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, রের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিক্স, এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহবল হইয়া উঠাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য[১]
তিনি আরো লিখেছেন,
আমরা ব্যক্তির জন্য আত্মবিসর্জন করিতেও পারি, কিন্তু মহ ভাবের জন্য সিকি পয়সাও দিতপারি নাআমরা কেবল ঘরে বসিয়া বড়ো কথা লইয়া হাসিতামাশা করিতে পারি, বড়ো লোককে লইয়া বিদ্রূপ করিতে পারি, তার পরে ফুড় ফুড়্করিয়া খানিকটা তামাক টানিয়া তাস খেলিতে বসিআমাদের কী হবে তাই ভাবিঅথচ ঘরে বসিয়া আমাদের অহংকার অভিমান খুব মোটা হইতেছেআমরা ঠিক দিয়া রাখিয়াছি আমরা সমুদয় সভ্য জাতির সমকক্ষআমরা না পড়িয়া পণ্ডিত, আমরা না লড়িয়া বীর, আমরা ধাঁ করিয়া সভ্য, আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট--আমাদের রসনার অদ্ভুত রাসায়নিক প্রভাবে জগতে যে তুমুল বিপ্লব উপস্থিত হইবে আমরা তাহারই জন্য প্রতীক্ষা করিয়া আছি; সমস্ত জগসেই দিকে সবিস্ময়ে নিরক্ষণ করিয়া আছে[২]  
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মানুষের বৈষম্যকে তিনি অস্বাভাবিক মনে করতেনবৈষম্যকে দূর করার জন্য তিনি বুর্জোয়া রাজনৈতিক নেতাদের মতো হয়তো হেন করেগা, তেন করেগা বলেননি; তবুও তিনি ছিলেন বিবেকহীন বৈষম্যের বিরুদ্ধেতাইতো বলছেন,
দেহের সমস্ত রক্ত মুখে এসে জমা হলে সেটাকে স্বাস্থের লক্ষণ বলে নাতেমনি গোটা দেশকে রিক্ত করে, নিঃস্ব করে, বঞ্চিত করে অল্প কিছু মানুষের জন্য অনন্যসাধারণ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করাটাও কোনো সভ্য সমাজের রীতি নয়

জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে তিনি এগিয়েছেন মানবমুক্তির সন্ধানেতিনি জেনেছেন মানুষের মুক্তিসংগ্রামে শামিল হলে সবচেয়ে কাছের ঘরের মানুষটিও বিরোধীতা করতে পারেতাই তিনি একলা লড়াই করতে সাহস যোগান স্বদেশ পর্বের গানে লিখেছেন  আপনজনে ছেড়ে যাবে, কিন্তু এতে দুর্ভাবনার কিছু নেই, পথে অন্ধকার নেমে আসলেও বারবার আলো জ্বালতে হবে, হয়তো দু'চারবার আলো নিভে যাবে কিন্তু একসময় আলো ঠিকই জ্বল্বে, কাছের মানুষটির পাষাণ হৃদয় না গললেও বনের প্রাণিও হয়তো লড়াকু মানুষটির কথা শুনবে বারবার চেষ্টা করেই আলোর য়ার খুলতে হবে।[]
আসবে পথে আঁধার নেমে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ধর্ম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভংগি ফুটে উঠেছে এই বাক্যে যেখানে তিনি বলছেন,
যে রাজা প্রজাকে দাস করে রাখতে চেয়েছে, সে রাজার সর্বপ্রধান সহায় ধর্ম, যা মানুষকে অন্ধ করে রাখেসে ধর্ম বিষকন্যার মতো; আলিঙ্গন করে সে মুগ্ধ করে, মুগ্ধ করে সে মারেশক্তিশেলের চেয়ে ভক্তিশে গভীরতর মর্মে গিয়ে প্রবেশ করে কেননা তার মার আরামের মার.... ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা ভালো।[]

সাহসি ও আশাবাদি রবীন্দ্রনাথ আহবান কবিতায় বলেন
রক্তে-রাঙা ভাঙন-ধরা পথে
দুর্গমেরে পেরোতে হবে বিঘ্নজয়ী রথে,
পরান দিয়ে বাঁধিতে হবে সেতু।
ত্রাসের পদাঘাতের তাড়নায়,
অসম্মান নিয়ো না শিরে, ভুলো না আপনায়।[]

সত্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের নানামুখী চিন্তা লক্ষ করা যায়। বোঝাপড়া কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছেন এই বলে যে,
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে
সত্যকে তিনি যত কঠিনই হোক না কেন গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি অনেক সময় সত্যকেই কঠিন বলেছেন। নিজে লিখেছেন সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা। রবীন্দ্রনাথের সত্যোপলব্ধি সম্বন্ধে হুমায়ুন আজাদের মূল্যায়ন,
সত্য ছাড়া সৌন্দর্যকে তিনি বেশ ভয় পেতেন, কে জানে কখন সৌন্দর্য আবার কোন রসাতলে ডুবোয়। সারা জীবনে পদ্যে ও গদ্যে সত্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি বহু কথা বলেছেন, কীটসের উক্তিটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের ভেবে ব্যবহার করেছেন বহু বার; কিন্তু যখনই তিনি উদ্ধৃত করেছেন উক্তিটি, তখনই ভুল উদ্ধৃত করেছেন, বা নিজের বিশ্বাস অনুসারে সাজিয়েছেন শব্দগুলোকে। কীটসের -কে রবীন্দ্রনাথ সব সময়ই উদ্ধৃত করেছেন -রূপে। কেনো এমন করেছেন রবীন্দ্রনাথ? কীটসের কাছে সৌন্দর্য আগে, রবীন্দ্রনাথের কাছে সত্য আগে কেনো? সৌন্দর্যকে প্রধান মনে করতে কি কোনো অপরাধবোধে ভুগতেন রবীন্দ্রনাথ?[] 
বিশ শতকের সূচনা থেকেই তিনি পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের ভয়াবহ পরিণামের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে উঠেছিলেন। স্বার্থদীপ্ত লোভ, হিংসার সব, অস্ত্রে অস্ত্রে মরণের উন্মাদ-রাগিণীর বিরুদ্ধে তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন তার গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা। উগ্র-জাতিপ্রেম ও পুঁজিবাদী জাতিয়তাবাদের মুখোশ খুলতেও কার্পণ্য করেননি। লিখেছেন,
শক্তিদম্ভ স্বার্থলোভ মারীর মতন
দেখিতে দেখিতে আজি ঘিরিছে ভুবন
দেশ হেতে দেশান্তরে স্পর্শবিষ তার
শান্তিময় পল্লী যত করে ছারখার।[৭]
  


তথ্যসূত্রঃ
১. বিদ্যাসাগরচরিত।
৩.  স্বদেশ পর্বের গান।
৪. রাশিয়ার চিঠি
৫. আহবান, জোড়াসাঁকো, কলিকাতা, ১ এপ্রিল, ১৯৩৯
৬. হুমায়ুন আজাদ, আমার অবিশ্বাস, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ, জুলাই ১৯৯৭, পৃষ্ঠা- ৫৫-৫৬।
৭. শক্তিদম্ভ; নৈবেদ্য। 

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...