রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (ডিসেম্বর ৯, ১৮৮০- ডিসেম্বর ৯, ১৯৩২) উনবিংশ শতাব্দীর
একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাঙ্গালী নারী জাগরণের
অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা
হয়।
রোকেয়ার
বাঙালিকে আত্মনির্ভর করতে চেয়েছিলেন। তাই নিরীহ
বাঙ্গালী প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “আমরা অলস, তরল মতি, শ্রমকাতর,
কোমলাঙ্গ বাঙ্গালী কিনা তাই ভাবিয়া দেখিয়াছি, সশরীরে পরিশ্রম করিয়া মুদ্রালাভ করা অপেক্ষা Old fool শ্বশুরের
যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করা সহজ।” তিনি সেই প্রবন্ধে আরো লিখেছিলেন “দেশের
দুর্ভিক্ষ নিবারণের জন্য পরিশ্রম করা অপেক্ষা আমেরিকার নিকট ভিক্ষা গ্রহণ করা সহজ।
তিনি সর্বদাই নারী-পুরুষের সহযোগিতামূলক মানবিক সম্পর্কে বিশ্বাস করতেন। অর্ধাঙ্গী
প্রবন্ধে তাঁর সুদৃঢ় উক্তি “জগতে দেখিতে পাই প্রত্যেকেই
প্রত্যেকের নিকট কোন না কোন প্রকার সাহায্য প্রার্থনা করে, যেন একে অপরের সাহায্য ব্যতীত
চলিতে পারে না।” তিনি ভুলেন না বাংলাদেশে স্বামী-স্ত্রীর
বিশাল বৈষম্যের কথাও। তিনি লিখেছেন “স্বামী যখন পৃথিবী হইতে
সূর্য্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য প্রস্থ
(সেলাই করিবার জন্য) মাপেন!”
তিনি জানেন
এ-পৃথিবীতে ক্রমাগত ভালো কাজ করা খুবই কঠিন। তাই স্ত্রীজাতির
অবনতি প্রবন্ধে লিখেছেন “এ পোড়া সংসারে কোন ভালো কাজটা
বিনা ক্লেশে সম্পাদিত হইয়াছে?” তিনি সেই প্রবন্ধে আরো লিখেছিলেন, “আমাদের অবস্থা আমরা চিন্তা না করিলে আর কেহ আমাদের জন্য ভাবিবে না। ভাবিলেও তাহাতে আমাদের ষোলো আনা উপকার হইবে না।”
পদ্মরাগ উপন্যাসের নায়িকা সিদ্দিকাকে তার ভাই বলছে, “তুই জীবন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হ! মুষ্টিমেয় অন্নের জন্য যাহাতে তোকে কোনও দুরাচার পুরুষের গলগ্রহ না হইতে হয় আমি তোকে সেইরূপ শিক্ষা-দীক্ষা দিয়া
প্রস্তুত করিব। তোকে বাল্য বিধবা কিংবা চিরকুমারীর ন্যায় জীবনযাপন করিতে হইবে; তুই সেজন্য আপন পাঁয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়া।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন