এশীয় শামখোল, Photo: Kiron Khan, Bangladesh |
বাংলা নাম: এশীয় শামখোল, শামুকখোল, শামুকভাঙ্গা,
বৈজ্ঞানিক নাম: Anastomus oscitans (Boddaert, 1783)
সমনাম: Ardea oscitans, Boddaert, 1783
ইংরেজি নাম/Common Name: Asian Openbill.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগত/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
পরিবার/Family: Ciconiidae
গণ/Genus: Anastomus, Linnaeus, 1758;
প্রজাতি/Species:
Anastomus oscitans (Boddaert, 1783)
বর্ণনা: এশীয় শামখোল অনন্য খোলা
ঠোঁট ও সাদা চোখের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য ৮১
সেমি, ডানা ৪০ সেমি,
ঠোঁট ১৫.৫ সেমি, পা ১৪.৫ সেমি,
লেজ ২০ সেমি। প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক
পাখির দেহ একদম সাদা দেখায়; কাঁধ-ঢাকনি, ডানার প্রান্ত-পালক, মধ্য-পালক ও লেজ সবুজে-কালো। প্রজননকালে
প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ একদম সাদা দেখায়। কাঁধ-ঢাকনি,
ডানার
প্রান্ত-পালক, মধ্য পালক এর রঙ হাল্কা ছাইরঙ। লেজের অগ্রভাগ সবুজাভ কিন্তু বাকি অংশের রঙ কালো। ঠোঁট লম্বা ভারি এবং
কালচে-লাল রঙের। দুই ঠোঁটের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকের ভিতরে শামুক
বা শামুক জাতীয় ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলে ভিতরের জীবন্ত অংশটুকু খায়। এদের চোখের রঙ সাদাটে। কোনো কোনো পাখির চোখের
রঙ হলদে-বাদামি হয়। চোখের চারদিকের চামড়া পালকহীন। পা বেশ
লম্বা,
পায়ের
পাতার রঙ অনুজ্জ্বল মেটে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া
প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধূসরাভ সাদা থাকে। এই সময় পা অনুজ্জ্বল পাটকেল বর্ণ ধারণ করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি
একই রকম দেখায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধোঁয়াটে-বাদামি। কাঁধ ঢাকনি কালচে
বাদামি বর্ণের হয়। শাবকগুলোর পা অনুজ্জ্বল হয়। এদের দু'ঠোঁটের মাঝখানের ফাঁক
কম বা অনুপস্থিত। একেবারে ছোট ছানার ঠোঁটে কোন ফাঁক থাকে না।
স্বভাব: এশীয় শামখোল হাওর,
বিল, মিঠাপানির জলা, হ্রদ, ধানখেত, উপকূলীয় প্যারাবন ও নদীর পাড়ে বিচরণ করে; সচরসচর ছোট ছোট দলে থাকে; বড় কলোনিতে
রাত্রিবাস ও প্রজনন করে। সচরাচর ছোট ঝাঁক বেঁধে থাকে। বড় একত্রে গাছে বা
জলাশয়ের ধারে একত্রের দলবদ্ধভাবে থাকে। খাবারের অভাব না হলে
এরা সাধারণত স্থান পরিবর্তন করে না। এরা ভোর বেলায় খাদ্যের সন্ধানে
বের হয়। অনেক সময় চক্রাকারে আকাশের উঁচুতে উঠে যায় এবং
দল বেঁধে ঘুরতে থাকে। পানির ধারে কিংবা অগভীর পানিতে আহার খোঁজে এবং ভূমিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক ও ঝিনুক, তাছাড়া
ছোট স্তন্যপায়ি প্রাণি, ব্যাঙ ও কাঁকড়াও খায়। সচরাচর পানির নিচে
শামুকের খোলক ভেঙে এরা পানির উপর মাথা তুলে শামুকের মাংস গিলে খায়। জুলাই-এপ্রিল মাসে প্রজননকালে পানকৌড়ি ও বগার মিশ্র কলোনিতে ডালপালা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। স্থানভেদে প্রজনন ঋতুতে বিভিন্নতা দেখা যায়। প্রজনন কালে এরা
গোঙানির মত শব্দ করে ডাকে ও ঠোঁটে ঠক্ ঠক্
করে শব্দ তোলে। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই ১০-১৫দিন ধরে
বাসা তৈরি করে। এদের ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৫ টি, মাপ ৫.৮×৪.১ সেমি। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনেই তা দেয়। প্রায় ২৫ দিনে ডিম
ফুটে ছানা বের হয়। ৩৫-৩৬ দিনে ছানারা বাসা ছাড়ে।
বিস্তৃতি: এশীয় শামখোল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহি, সিলেট ও রংপুর বিভাগের জলাশয়ে পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলাদেশের রাজশাহীর দুর্গাপুর,
নাটোর,
পুটিয়া,
ফেনী,
সান্তাহার,
মহাদেবপুর,
জয়পুরহাট,
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটর হাওর এলাকায় এই পাখি অল্প-বিস্তর দেখা যায়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ থেকে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে পৃথিবীতে বিপদমুক্ত পাখি
হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে সংকটাপন্নরূপে বিবেচিত।
বিবিধ: Anastomus গণে পৃথিবীতে দুই প্রাজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার
একটি প্রজাতি।
এশীয় শামখোল হত্যাকাণ্ড: ২২ ডিসেম্বর, ২০১২ তে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গ্রাম বয়রা-সালাকান্দিতে প্রায়
৫০টি এশীয় শামখোল পাখি গুলি করে মারা হয়েছে বলে ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খবর আমি খবর
পাই। এই পাখিগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা আমি চার বছর ধরে করছি। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমিনুর রহমান
স্যারও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু করা গেল না।
এশীয় শামখোলের কলোনি: এশীয় শামখোল বাসা তৈরি করে ও ছানা তোলে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলায়। সেগুলো হলো:
১. রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি চকপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদের আমবাগানে ২০১০-১২ সালে। এছাড়া ২০০৭ সালে রাজশাহীর দুর্গাপুরের বাজখুলশী
গ্রামেও বাসা বানিয়েছিলো।
২. ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে গড়েয়া যেতে ডানপাশের ছোট গ্রাম বটতলীর গেঁদা মাস্টারের
বাগানে।
৩. কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এক গ্রামে ২০০৯-১২ সালে। এছাড়া কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার আটিগ্রামে ২০১৪ সালে বাসা তৈরি করেছে।
৪. জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার শাখিদারপাড়া গ্রামে ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।
৪. জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার শাখিদারপাড়া গ্রামে ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।
৫. ফেনী জেলায়, তবে এ জেলার তথ্য অসম্পূর্ণ।
৬. নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের আলীদেওনা গ্রামে বাসা বানায় ও ছানা তোলে ২০১৪ সালে।
৭. নাটোরের সমসখলশি গ্রামে বাসা তৈরি করছে গত কয়েক বছর। ২০১৪ সালে এগ্রামে অন্তত ২০০০ শামখোল বাস করছে।
৬. নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের আলীদেওনা গ্রামে বাসা বানায় ও ছানা তোলে ২০১৪ সালে।
৭. নাটোরের সমসখলশি গ্রামে বাসা তৈরি করছে গত কয়েক বছর। ২০১৪ সালে এগ্রামে অন্তত ২০০০ শামখোল বাস করছে।
Read news of Bangladesh in English on Asian Openbill, Anastomus oscitans, এশীয় শামখোল, is a rare resident bird in Bangladesh.
আরো পড়ুন:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন