শুক্রবার, নভেম্বর ৩০, ২০১২

এশীয় শামখোল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি


এশীয় শামখোল, Photo: Kiron Khan, Bangladesh

বাংলা নাম: এশীয় শামখোল, শামুকখোল, শামুকভাঙ্গা,
বৈজ্ঞানিক নাম: Anastomus oscitans (Boddaert, 1783)
সমনাম: Ardea oscitans, Boddaert, 1783 
ইংরেজি নাম/Common Name: Asian Openbill.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগ/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
পরিবার/Family: Ciconiidae
গণ/Genus: Anastomus, Linnaeus, 1758;  
প্রজাতি/Species: Anastomus oscitans (Boddaert, 1783)

বর্ণনা: এশীয় শামখোল অনন্য খোলা ঠোঁট ও সাদা চোখের জলচর পাখিএর দৈর্ঘ্য ৮১ সেমি, ডানা ৪০ সেমি, ঠোঁট ১৫.৫ সেমি, পা ১৪.৫ সেমি, লেজ ২০ সেমিপ্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ একদম সাদা দেখায়; কাঁধ-ঢাকনি, ডানার প্রান্ত-পালক, মধ্য-পালক ও লেজ সবুজে-কালো প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ একদম সাদা দেখায়কাঁধ-ঢাকনি, ডানার প্রান্ত-পালক, মধ্য পালক এর রঙ হাল্কা ছাইরঙলেজের অগ্রভাগ সবুজাভ কিন্তু বাকি অংশের রঙ কালো ঠোঁট লম্বা ভারি এবং কালচে-লাল রঙেরদুই ঠোঁটের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে এই ফাঁকের ভিতরে শামুক বা শামুক জাতীয় ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলে ভিতরের জীবন্ত অংশটুকু খায়এদের চোখের রঙ সাদাটেকোনো কোনো পাখির চোখের রঙ হলদে-বাদামি হয়চোখের চারদিকের চামড়া পালকহীনপা বেশ  লম্বা, পায়ের পাতার রঙ অনুজ্জ্বল মেটেপ্রজনন মৌসুম ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধূসরাভ সাদা থাকেএই সময় পা অনুজ্জ্বল পাটকেল বর্ণ ধারণ করেপুরুষ ও স্ত্রী পাখি একই রকম দেখায় অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধোঁয়াটে-বাদামিকাঁধ ঢাকনি কালচে বাদামি বর্ণের হয়শাবকগুলোর পা অনুজ্জ্বল হয়এদের দু'ঠোঁটের মাঝখানের ফাঁক কম বা অনুপস্থিতএকেবারে ছোট ছানার ঠোঁটে কোন ফাঁক থাকে না
স্বভাব: এশীয় শামখোল হাওর, বিল, মিঠাপানির জলা, হ্রদ, ধানখেত, উপকূলীয় প্যারাবন ও নদীর পাড়ে বিচরণ করে; সচরসচর ছোট ছোট দলে থাকে; বড় কলোনিতে রাত্রিবাস ও প্রজনন করে সচরাচর ছোট ঝাঁক বেঁধে থাকেবড় একত্রে গাছে বা জলাশয়ের ধারে একত্রের দলবদ্ধভাবে থাকেখাবারের অভাব না হলে এরা সাধারণত স্থান পরিবর্তন করে না এরা ভোর বেলায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়অনেক সময় চক্রাকারে আকাশের উঁচুতে উঠে যায় এবং দল বেঁধে ঘুরতে থাকে পানির ধারে কিংবা অগভীর পানিতে আহার খোঁজে এবং ভূমিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক ও ঝিনুক, তাছাড়া ছোট স্তন্যপায়ি প্রাণি, ব্যাঙ ও কাঁকড়াও খায় সচরাচর পানির নিচে শামুকের খোলক ভেঙে এরা পানির উপর মাথা তুলে শামুকের মাংস গিলে খায় জুলাই-এপ্রিল মাসে প্রজননকালে পানকৌড়ি ও বগার মিশ্র কলোনিতে ডালপালা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুতে বিভিন্নতা দেখা যায়প্রজনন কালে এরা গোঙানির মত শব্দ করে ডাকে ও ঠোঁটে ঠক্ ঠক্ করে শব্দ তোলে স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই ১০-১৫দিন ধরে বাসা তৈরি করে এদের ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় - টি, মাপ .×. সেমিস্ত্রী ও পুরুষ দু'জনেই তা দেয়প্রায় ২৫ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়৩৫-৩৬ দিনে ছানারা বাসা ছাড়ে
বিস্তৃতি: এশীয় শামখোল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহি, সিলেট ও রংপুর বিভাগের জলাশয়ে পাওয়া যায় এছাড়া বাংলাদেশের রাজশাহীর দুর্গাপুর, নাটোর, পুটিয়া, ফেনী, সান্তাহার, মহাদেবপুর, জয়পুরহাট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটর হাওর এলাকায় এই পাখি অল্প-বিস্তর দেখা যায় পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে
অবস্থা: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে পৃথিবীতে বিপদমুক্ত পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছেবর্তমানে এটি বাংলাদেশে সংকটাপন্নরূপে বিবেচিত
বিবিধ: Anastomus গণে পৃথিবীতে  দুই প্রাজাতির পাখি রয়েছেবাংলাদেশে রয়েছে তার একটি প্রজাতি
এশীয় শামখোল হত্যাকাণ্ড: ২২ ডিসেম্বর, ২০১২ তে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গ্রাম বয়রা-সালাকান্দিতে প্রায় ৫০টি এশীয় শামখোল পাখি গুলি করে মারা হয়েছে বলে ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খবর আমি খবর পাইএই পাখিগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা আমি চার বছর ধরে করছিগাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমিনুর রহমান স্যারও চেষ্টা করেছেনকিন্তু কিছুতেই কিছু করা গেল না


এশীয় শামখোলের কলোনি: এশীয় শামখোল বাসা তৈরি করে ও ছানা তোলে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলায়। সেগুলো হলো: 
১. রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি চকপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদের আমবাগানে ২০১০-১২ সালে। এছাড়া ২০০৭ সালে রাজশাহীর দুর্গাপুরের বাজখুলশী গ্রামেও বাসা বানিয়েছিলো।  
২. ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে গড়েয়া যেতে ডানপাশের ছোট গ্রাম বটতলীর গেঁদা মাস্টারের বাগানে।
৩. কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এক গ্রামে ২০০৯-১২ সালে। এছাড়া কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার আটিগ্রামে ২০১৪ সালে বাসা তৈরি করেছে।
৪. জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার শাখিদারপাড়া গ্রামে ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত

৫. ফেনী জেলায়, তবে এ জেলার তথ্য অসম্পূর্ণ। 
৬. নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের আলীদেওনা গ্রামে বাসা বানায় ও ছানা তোলে ২০১৪ সালে।
৭. নাটোরের সমসখলশি গ্রামে বাসা তৈরি করছে গত কয়েক বছর। ২০১৪ সালে এগ্রামে অন্তত ২০০০ শামখোল বাস করছে।

Read news of Bangladesh in English on Asian Openbill, Anastomus oscitans, এশীয় শামখোল, is a rare resident bird in Bangladesh. 



আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা 

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

৪. বাংলাদেশের ফলবৈচিত্র্যের একটি বিস্তারিত পাঠ

শনিবার, নভেম্বর ২৪, ২০১২

মুক্ত করো এই বর্বরতা থেকে




২৪ নভেম্বর, ২০১২, সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত এক মা ।
সর্গঃ পুঁজিবাদের আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া বাংলাদেশের শ্রমিকদের

এলোমেলো লাশ
বাংলার আকাশ
কে দিতে পারে
সজীব বাতাস

এক গলা দুঃখ
মার খালি বুক
লুট হওয়া প্রাণ
স্বদেশ শ্মশান

আগুনের শিখা
রাখে নাক লিখা
রাখে পোড়া ছাই
বোঝে না ধানাই

এখনো কী আছে
একফোঁটা ভালো
এনে দিতে পারে
যা কিছু জ্বালালো।।

২৫ নভেম্বর, ২০১২; বাংলাদেশ

মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৩, ২০১২

তুলসি এক মহা উপকারি ভেষজ গাছ



তুলসি, এক মহা উপকারি ভেষজ গাছ

বাংলা নাম: তুলসি,
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum tenuiflorum L. - holy basil
সমনাম: Ocimum sanctum L.
ইংরেজি নাম: Sacred Basil, Holy Basil.
আদিবাসি নামঃ তুলসি (Rakhaing), তুলসি (Tripura), Nung Na (Marma), Nung Gri (Marma), Tulosi (Tanchangya), Ramal (Tanchangya), Mida phular gaas (Tripura), তুলসি ফাং (Garo)

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae - Plants
উপরাজ্য: Tracheobionta - Vascular plants
অধিবিভাগ: Spermatophyta - Seed plants
বিভাগ: Magnoliophyta - Flowering plants
শ্রেণী: Magnoliopsida - Dicotyledons
উপশ্রেণি: Asteridae  
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Lamiaceae - Mint family
গণ: Ocimum L. - basil
প্রজাতি: Ocimum tenuiflorum L. - holy basil
পরিচিতি: তুলসী একটি সুগন্ধি বিরুত্‍ জাতীয় উদ্ভিদ যার সাবেক বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছিলো পবিত্র স্থানএটির ইংরেজি নাম holy basil, বা tulasi. তুলসির সাধারণত দুটি রঙ দেখা যায়। একটি কৃষ্ণবর্ণের অন্যটি হরিৎবর্ণের। কৃষ্ণ বা কালো বর্ণেরটিকে বলে কালো তুলসি এবং হরিত বর্ণেরটিকে বলে রাধা তুলসি। হরিৎ বর্ণের ও কৃষ্ণবর্ণের দুটি তুলসীর একই গুণ। প্রধানত হিন্দুদের পুজোপচারে ব্যবহৃত এই তুলসিই বাংলাদেশ ভারতের সর্বত্র পাওয়া যায়।
হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণত কৃষ্ণ ও রাধা তুলসী এই দুই প্রকারে প্রাপ্ত তুলসী হিন্দু গৃহে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে যেহেতু এর পিছনে রয়েছে ধর্মীয়, পরিবেশগত ও বৈজ্ঞানিক কারণ
তুলসি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পড়তে এই লিংকে যান। 
ধর্মীয় কারণের ভেতরে রয়েছে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে সীতাস্বরূপা, স্কন্দপুরাণে লক্ষীস্বরূপা, চর্কসংহিতায় বিষ্ণুর ন্যায় ভুমি, পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া, ঋকবেদে কল্যাণী বলা হয়েছেস্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসী দেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন
পরিবেশগত কারণের ভেতরে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তুলসীগাছ একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে যেখানে অন্য যে কোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে তাই রাতের বেলাতে তুলসীতলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী এছাড়া তুলসীগাছ ভুমি ক্ষয় রোধক এবং তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে
এছাড়াও বর্তমানে আমরা আরো যে কয়েক প্রকার তুলসীগাছ সাধারণত দেখতে পাই সেগুলো হচ্ছে:
১. বাবুই তুলসি বা দুলাল তুলসি; ২. রাম তুলস; ৩. বনবর্বরিকা বা বনতুলসী’ এবং ৪. কর্পূর তুলসি যা থেকে কর্পূর (camphor oil) পাওয়া যায়এগুলো ছাড়াও এই গণের আরও ৪টি প্রজাতিও ভারতে পাওয়া যায়। তবে উল্লেখ করা উচিত হবে যে Ocimum গণে ৬০টির অধিক প্রজাতি আছে।
তুলসির ঔষধি গুণাগুণ এবং এর উপকারিতা পড়তে এই লিংকে যান

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...