যুক্তরাষ্ট্রের
সপ্তম নৌবহরের ভাইস অ্যাডমিরাল স্কট এইচ সুইফট ৬-৮ এপ্রিল,
২০১২ ঢাকা সফর করছেন। ছয়
তারিখ শনিবার
দুপুরে তিনি ঢাকা পৌঁছান। ৮ এপ্রিল, ২০১২ ঢাকা সফর শেষ করবেন তিনি।
মার্কিন
দূতাবাসের সপ্তম নৌবহর বিষয়ে এক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সপ্তম
নৌবহরের এলাকার আওতায় রয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার, যা
উত্তরে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ থেকে দক্ষিণে আটলান্টিক এবং
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সময়রেখা
থেকে ৬৮তম পূর্ব ভূমধ্যরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। যেকোনো প্রদত্ত সময়ে ৬০ থেকে ১০০ জাহাজ, ২০০ থেকে ৩০০ যুদ্ধবিমান
এবং ৪০ হাজার নৌসেনা ও মেরিন কোর সেনাকে এই সপ্তম
নৌবহরে নিয়োজিত করা হয়।
এর আগে গত বছর ২
জুন ২০১২ বাংলাদেশ সরকারের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক
বিবৃতিতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন
নৌঘাঁটি স্থাপনের খবরটিকে
ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ভিত্তিহীন বললেই
তা ভিত্তিহীন হয়ে
যায় না।
উল্লেখ্য ১
জুন, ২০১২ হঠাৎ
করেই সংবাদ ও আলোচনায়
আবার আসে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম
নৌবহর । হুট
করেই গত দুই জুন
টাইমস
অফ ইন্ডিয়া খবর প্রকাশ করে
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদিরা আবার
বাংলাদেশের উপর নজর
রাখছে এবং ৪১ বছর
পর আবার তারা বাংলাদেশে
সপ্তম নৌবহর স্থাপন করতে
চায়। সেই প্রতিবেদনে
বাংলাদেশে আমেরিকান রণতরীর
ঘাঁটি গাড়ার পেছনে কারণ
হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে চিনকে। কারণ
চিন দক্ষিণ চিন সাগরে
তাদের নৌজাহাজ মোতায়েন করেছে। মার্কিনিরাও চিনের
বিরুদ্ধ-কৌশলগত
কারণে জাপান থেকে দিয়াগো
গার্সিয়া পর্যন্ত ভারত
মহাসাগরে তার সৈন্য
ও নৌবহর মোতায়েন করতে
চায়। এসবেরই পরিপ্রেক্ষিতে
আফগানিস্তান থেকে সৈন্য
প্রত্যাহারের পর এশিয়ায়
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কর্তৃত্ব
বজায় রাখার জন্য চট্টগ্রামে
বা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম
নৌবহর মোতায়েন করা মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত দরকার। যদিও মার্কিন স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় এ ধরনের সামরিক
পদক্ষেপের কথা নাকচ
করে দিয়েছে বলে টাইমস
অফ ইন্ডিয়ার খবরে
বলা হয়।
হিলারি
ক্লিনটন গত ৫ ও ৬ মে ২০১২ তে বাংলাদেশ সফর করেন। তখনই চট্টগ্রামে মার্কিন নৌবহর মোতায়েনের
ব্যপারে হিলারীর সাথে বাংলাদেশ সরকারের কথা হয় বলে টাইমস অফ ইণ্ডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ
করা হয়; যদিও বাংলাদেশের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেনি । সেই
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় চট্টগ্রামে আমেরিকান নৌবহর ঘাঁটি গাঁড়লে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। চিনও তাই মনে করে বলে চিনের এক ওয়েবসাইটে জানানো হয়। কারণ তখন ভারতের সকল নিরাপত্তা
স্থাপনা আমেরিকার নজরদারির আওতায় থাকবে।
যদিও
আমরা বাংলাদেশের জনগণ খুব ভালো করেই জানি ভারত এখন মার্কিনের কৌশলগত বন্ধু। হিলারীর
সেই সফরের আগে থেকেই বাংলাদেশে মার্কিন সেনাবাহিনী উপস্থিত রয়েছে। দুদেশের সেনাবাহিনী
মাঝেমধ্যেই যৌথ মহড়া দেয়। দুদেশ ‘পরস্পর সামরিক সহযোগিতা’র
নামে মূলত বাংলাদেশ মার্কিন হুকুম তামিল করে। এছাড়াও আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের
সেনাবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়েই কাজ করছে। এই যে মার্কিনীদের কথায় বাংলাদেশের
সেনাবাহিনী ও সরকার উঠছে-বসছে তা দ্বারা শুধু বাংলাদেশের দূর্বলতাই প্রকাশ পাচ্ছে না; বাংলাদেশের
স্বাধিনতা-স্বার্বভৌমত্বও শক্তিহীন হয়ে পড়ছে।
আমরা
জানি হিলারির সফরের সময়েই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ও কৌশলগত অংশীদারী চুক্তি
সম্পাদন করে আর এই চুক্তির কারণেই চট্টগ্রামে নৌ-ঘাঁটি করার পাঁয়তারা করছে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির
সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান ২ জুন সংবাদপত্রে দেয়া এক
বিবৃতিতে মার্কিনের সাথে সম্প্রাদিত সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করার এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর
বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পাল্টা হুমকির মুখে তা
ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন