চিনুয়া আচেবে |
আফ্রিকান
সাহিত্য জগতের খ্যাতিমান পুরুষ, নাইজেরিয়ার
সাহিত্যিক আইকন,
কয়েকটি উপন্যাসের লেখক চিনুয়া আচেবে (১৬.১১.১৯৩০-২২.০৩.২০১৩) ১৯৩০
সালে নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ
করেছিলেন। নাইজেরিয়ার
ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা
ও সাহিত্যে শিক্ষা
সমাপ্তির পর নাইজেরিয়ান
বেতারে কর্মজীবন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে
তার লেখালেখি শুরু হয়। ১৯৬৭
সালে তিনি নিজেই একটি
প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা
করেন। তাঁর
সংগে নাইজেরিয়ার একজন
বিশিষ্ট কবিও যোগ
দিয়েছিলেন। গৃহযুদ্ধকালে
আচেবে দেশ ত্যাগ করে
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভ্রাম্যমাণ অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত
থাকেন। পরবর্তীকালে
১৯৭৩ সালে নাইজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি
ভাষার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান
করেন। ১৯৯০ সালে
গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত
হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে
বসবাস করে আসছিলেন চিনুয়া। এরপর তিনি প্রায়
২০ বছরের বেশি সময়
কোনো বই লেখেননি। তার
পরবর্তী বছরগুলো বেশিরভাগই
কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যাপনা করে। ২০১৩
সালের ২২
মার্চ এক বর্ণাঢ্য প্রতিবাদি
জীবন শেষে তিনি মারা
গেলেন।
১৯৫৮ সালে প্রকাশিত
প্রথম উপন্যাস ‘থিংস ফল
অ্যাপার্ট’-এর সুবাদে ব্যাপক
পরিচিত লাভ করেন আচেবে। উপন্যাসটি অনুবাদ
হয়েছে ৫০টিরও বেশি ভাষায়। তাছাড়া, বিশ্বজুড়ে
উপন্যাসটি প্রায় ১ কোটি কপি
বিক্রি হয়। তার
আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস
‘অ্যান্টহিলস
অফ দি সাভানা’ প্রকাশিত
হয় ১৯৮৮ সালে।
থিংস
ফল অ্যাপার্ট উপন্যাসের জন্য ২০০৭ সালে বুকার পুরস্কার লাভ করেন চিনুয়া আচেবে। চিনুয়া ২০টিরও বেশি লেখা লিখেছেন। এর মধ্যে
কয়েকটি লেখায় তিনি রাজনীতিবিদ এবং নাইজেরিয়ার নেতাদের নেতৃত্বের
ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা
প্রকাশ করেছেন।
তার বইগুলোতে দেশটির ঔপনেবেশিক সময়ে ইবো সমাজের ঐতিহ্য, দেশটির
সংস্কৃতিতে খৃস্টানদের আগ্রাসন
এবং আফ্রিকা ও পশ্চিমাদের মধ্যকার প্রথাগত দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে। এছাড়াও তিনি অনেক
ছ্টেগল্প,
শিশু সাহিত্য এবং প্রবন্ধও রচনা করেছেন।
আচেবে
শুধুমাত্র সাহিত্য অথবা রাজনীতির মানুষ নন, তিনি
শুধুমাত্র আফ্রিকার মানুষের কন্ঠস্বর নন।
তিনি গোটা বিশ্বে পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী
কায়েমী শক্তির বিপক্ষে যুদ্ধবন্দী, দারিদ্রপীড়িত, শোষিত
মানুষের প্রাণের আত্মীয়। তিনি কলম দিয়ে বলেছেন শোষিত মানুষের মুক্তির কথা।
চিনুয়া
আচেবের লেখা কারাগারের দেয়ালও ভেঙে দেয়-বলে মন্তব্য
করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত
নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা । ‘বর্বর’ খেতাব পাওয়া আফ্রিকার ভূমিহীন দেশহীন মানুষগুলোর কথা বলার এই লেখক অজস্র
নিপীড়িত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।
লেখক
হিসাবে চিনুয়া আচেবি আফ্রিকা এবং পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধন
হিসাবে কাজ করেছিলেন।তার কাজকে মানদণ্ড ধরেই প্রজন্মান্তরে
আফ্রিকান লেখকদের কাজের মূল্যায়ন হয়ে আসছে। আচেবে বেঁচে না থাকলে ও কোটি কোটি মানুষের
কাছে
আজীবন প্রেরনার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবে তার ‘থিংক ফল অ্যাপার্ট’, ‘গড অব অ্যারো’র
মত অসংখ্য রচনা।
তাঁর
একটি ইংরেজি সাক্ষাতকার পড়ুন এখান
থেকে। এছাড়া
আপনারা চিনুয়া আচেবের একটি বাংলায় অনূদিত সাক্ষাতকার পড়ুন এই লিংক থেকেঃ আপনি
যা হারিয়েছেন তা ফিরে পেতে ইংরেজি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।