ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার অনুরূপতাই সত্য।
এধরনের অনুরূপতা সাধারণত আংশিক ও সন্নিকটবর্তী হয়। কোন সত্যকে আমরা প্রতিষ্ঠা
করতে পারি তা সব সময়েই সত্য আবিষ্কার করার ও তাকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের হাতে
যে উপায়গুলি আছে তাদের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু তারই সঙ্গে এই অর্থে আপেক্ষিক হলেও ধ্যান-ধারণার
সত্যতা সেই সমস্ত নৈর্বক্তিক তথ্যের
ওপর নির্ভর করে যাদের সঙ্গে ঐ ধ্যান-ধারণার সাদৃশ্য রয়েছে। আমরা কখনোই পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ বা চরম সত্যকে জানতে
পারি না, কিন্তু সর্বদা তার দিকেই এগিয়ে চলেছি।
ট্রুথ অর্থে সত্য শব্দটি প্রাচীন দাস যুগ থেকেই আছে। আর সমস্ত
চিন্তারই শ্রেণি চরিত্র আছে। আর বিজ্ঞান দাস যুগে ছিলো, সামন্তযুগে পিছিয়ে গেছিল, তখন আলকেমি এবং আরো কিছু ব্যাপার ছিলো, তবে বিজ্ঞান ছিলো না মনে হয়। বিজ্ঞানকে
বুর্জোয়ারা পুনরায় বাঁচিয়ে তোলে।
মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা বিজ্ঞানকে অধীন করে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের, মাওবাদীরা অধীন করে দ্বন্দ্ববাদের। আর দর্শন হচ্ছে
প্রকৃতি-বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের
ঘনীভূত রূপ। ফলে শুধু বিজ্ঞানের পূজারিরা
এখন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক হতে
বাধ্য। একটি মজার প্রসঙ্গ, মোহনদাস গান্ধীর মতো পাজীর আত্মজীবনীর নাম “মাই
এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ”।
চরম ও আংশিক সত্য
আমরা দেখেছি যে, ধ্যান-ধারণার বিকাশে হরেক
রকমের অধ্যাসের যেমন উদ্ভব হয়, তেমনি সত্যেরও আবির্ভাব ঘটে।
তাহলে সত্য বস্তুটি কী? এটি হলো ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার মধ্যে অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য।
আমাদের ধ্যান-ধারণা ও
বাস্তবতার মধ্যে এই অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য কিন্তু একমাত্র ধীরে ধীরেই প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং তাও আবার প্রায়শঃই আংশিক ও অসম্পূর্ণ অনুরূপতা, ঐক্য বা
সাদৃশ্যের বেশি নয়। কারণ, একটি ধারণা বা ভাব সমস্ত দিক
থেকেই তার বাস্তব বিষয়ের অনুরূপ নাও হতে পারে, কিন্তু আংশিক
অনুরূপ হতে পারে; আবার ঐ বিষয়ে এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে
যা ধারণায় আদৌ স্থান পায় না, যার ফলে ধারণা ও তার নৈর্বক্তিক বস্তুর অনুরূপতা অসম্পূর্ণ
থেকে যায়। এইসব ক্ষেত্রে অবশ্য একথা আমাদের বলা উচিত নয় যে আমাদের ধারণাটাই ভুল
ছিল, কিন্তু
তাহলেও তা সর্বাংশে, সম্পূর্ণভাবে চরম সত্য বলে বিবেচিত হবে
না। অতএব, সত্য এমন কোনো সম্পত্তি নয় যে একটি ধারণা বা
প্রতিজ্ঞা, হয় তার অধিকারী, নয় তো তা
নয়; একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট
সীমার মধ্যে এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই সত্য একটি ধারণার উপাদান হতে পারে।
তথ্যসূত্র
১. মরিস কর্নফোর্থ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, অনুবাদ ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, প্রকাশকাল নভেম্বর ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৫৩২-৫৩৩।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন