রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

সতীশ পাকড়াশী ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা

বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী (১৩ ডিসেম্বর ১৮৯১  ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লববাদী মুক্তিযোদ্ধা।

ছাত্র থাকাকালীন মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সংস্পর্শে আসেন। তার ফলশ্রুতিতে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তিনি তৎকালীন গোপন বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। তাঁদের চেষ্টায় পার্শ্ববর্তী সাটিরপাড়া গ্রামে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা লাঠি, ছুরি এবং ড্রিল নিয়ে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য নিয়মিত জড়ো হতে থাকেন। প্রমথনাথ মিত্র যুবকদের বলেছিলেন যে বিদেশী পণ্যের বিরুদ্ধে পিকেটিং দিয়ে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না, যা শুধুমাত্র সহিংস বিদ্রোহ দ্বারা স্বাধীনতা অর্জন করা যেতে পারে; তাই দলে দলে নিজেকে সংগঠিত করতে হবে। তাই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরেন। 

সতীশ পাকড়াশী ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। ঐ বছরই অস্ত্র আইনে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করা আরম্ভ করেন। মুক্তি পেয়ে নরসিংদীতে ফিরে এসে আবার গোপন দলের কাজে যোগ দেন। তাকে মালদহে পাঠানো হয়। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা যান। তৎকালীন আধুনিক বর্বর ব্রিটিশ সরকার একাধিক রাজনৈতিক ডাকাতির অপরাধে তার নামে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় পুলিশের দমননীতির জন্যে সহকর্মী নলিনীকান্ত বাগচীর সাথে আত্মগোপনে চলে যান। সমিতির আরো কয়েকজন সদস্যসহ তারা আসামের গৌহাটিতে গিয়ে সেখান থেকে সারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবের কাজ পরিচালনা করতে থাকেন। পুলিশ ১২ জানুয়ারি ১৯১৮ তারিখে তাদের গোপন আস্তানা ঘিরে ফেললে তারা ৭ জন নিকটের নবগ্রহ পাহাড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং পুলিশবাহিনীর সাথে রিভলভার নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। ৫ জন ধরা পড়লেও তিনি ও নলিনীকান্ত বাগচি পালাতে সক্ষম হন। দুজনেই পদব্রজে কলকাতায় চলে যান। নলিনীকান্ত বাগচি এই ঘটনার কিছুকাল পরেই ঢাকা শহরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।

সতীশ পাকড়াশী ১৯১৮ সালে কলকাতায় ধরা পড়লে প্রথমে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেল ও পরে রাজশাহী জেলে বন্দি করে রাখা হয়। তিন বছর পরে তিনি মুক্তি পান। ১৯২৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আগত অবনী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাকে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে সমিতি, তবে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং রাজবন্দী হিসেবে ৫ বছর জেল খাটেন। এই সময় তিনি আলিপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা, মহারাষ্ট্রের যারবেদা এবং কর্ণাটকের বেলগাঁও জেলে বন্দি থাকেন। ১৯২৯ সালে মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার হন। তাকে আন্দামান সেলুলার জেলে দ্বীপান্তর করা হয়। ১৯৩৩ থেকে পরবর্তী ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দি থাকেন। এই সময় তিনি সাম্যবাদে আকৃষ্ট হন। তার জীবনের ৩২ বছর কারান্তরালে কেটেছে। ১১ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন।

সেলুলার জেলে কমিউনিস্ট কনসলিডেশনের সদস্য ছিলেন। জেলখানায় সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কারামুক্তির পর ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। পার্টি নিষিদ্ধ হলে আত্মগোপন করেন। বক্সা দুর্গে বন্দী ছিলেন অন্যান্য সাম্যবাদী বিপ্লবীদের সাথে। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)তে যোগ দেন। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে মারা যান।

ব্যক্তিগত একটি স্মৃতি

২০০৬-০৭ সাল হবেনরসিংদী গেছি। নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা একদিন বিকেলে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেন। এদিক-সেদিক এই রাস্তা সেই রাস্তা ঘুরিয়ে কোনো এক গ্রামের একটি বিশাল বটগাছের পাশে গাড়ি দাড় করালেন। গাছের থেকে একটু দূরে ঝোপঝাড়ের মাঝখানে এক পুরনো মন্দির। তিনি এরকম এক জায়গায় দাড়িয়ে বললেনএই অঞ্চলে ৪০-৫০ বছর আগেও ঘন জংগল ছিলোএসব জায়গায় লুকিয়ে থাকতেন সে সময়ের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীরা। সতীশচন্দ্র পাকড়াশী নামে এক বিপ্লবী পাশেই জন্মেছিলেন। তিনি এসব জায়গায় লুকিয়ে থেকেই কাজ করতেন।

সেই থেকে চিনি তাঁকে। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশীর প্রতি। আজ বাংলাদেশে অজস্র তুচ্ছ আর ইতরেরা মহামহিম সেজেছে মুখোশের আড়ালেঅথচ এই বিপ্লবীদের কে মনে রেখেছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...