সোমবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২

কুসংস্কার এমন বিশ্বাস বা অনুশীলন যা অযৌক্তিক বা অতিপ্রাকৃত বলে বিবেচিত

 


কুসংস্কার (ইংরেজি: Superstition) হচ্ছে এমন কোনো বিশ্বাস বা অনুশীলন যা অ-চর্চাকারীদের দ্বারা অযৌক্তিক বা অতিপ্রাকৃত বলে বিবেচিত হয়, যেটি ভাগ্য বা জাদু, অনুভূত অতিপ্রাকৃত প্রভাব বা অজানা ভয়ের জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভাগ্য, তাবিজ, জ্যোতিষশাস্ত্র, কপাল বলার, আত্মা এবং কিছু অলৌকিক সত্তাকে ঘিরে বিশ্বাস এবং অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ করে এই বিশ্বাস যে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি নির্দিষ্ট (আপাতদৃষ্টিতে) সম্পর্কহীন পূর্বতন ঘটনাগুলির দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে।

এছাড়াও, কুসংস্কার শব্দটি প্রায়শই এমন একটি ধর্মকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যা একটি প্রদত্ত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা অনুশীলন করা হয় না; যদিও সেটা প্রচলিত ধর্ম হিসেবে টিকে থাকে এবং সংখ্যা গরিষ্ঠরা সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে দেখে অথবা ধর্মবিরোধীদের দ্বারা সমস্ত ধর্মের জন্য সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে দেখানো হয়। মধ্যযুগীয় বর্বর ইউরোপে ডাইনি শিকারের ঘটনাগুলি সাধারণত ধর্মীয় কুসংস্কার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। 

কুসংস্কার হিসাবে বিকল্প ধর্মীয় বিশ্বাস

একটি প্রদত্ত সংস্কৃতিতে সাধারণভাবে গৃহীত ধর্ম থেকে ভিন্ন ধর্মীয় অনুশীলনকে কখনও কখনও কুসংস্কার বলা হয়; একইভাবে, একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আনা নতুন অনুশীলনগুলিকে বাদ দেওয়ার প্রয়াসে নতুন অনুশীলনগুলোকে কুসংস্কার হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। একইভাবে, ভক্তির অত্যধিক প্রদর্শনকে প্রায়ই কুসংস্কারপূর্ণ আচরণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রাচীনকালে, ল্যাটিন superstitio শব্দটি, এর সমতুল্য গ্রীক deisidaimonia শব্দটির মতো, অতিরঞ্জিত আচার এবং ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণ মনোভাবের সাথে যুক্ত ছিল। গ্রীক এবং রোমান বহুঈশ্বরবাদীরা, যারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক শর্তে দেবতার সাথে তাদের সম্পর্কের মডেল তৈরি করেছিল, সেই ব্যক্তিকে তিরস্কার করত যে ক্রমাগত দেবতাদের চিন্তায় ভয়ে কাঁপত, যেমন একজন ক্রীতদাস একজন নিষ্ঠুর এবং খামখেয়ালী প্রভুকে ভয় পায়। দেবতাদের প্রতি এমন ভয়কেই রোমানরা কুসংস্কাররূপে বোঝাত (Veyne 1987, p. 211)দিদেরো তাঁর Encyclopédie-তে কুসংস্কারকে সাধারণভাবে ধর্মের যে কোনো বাড়াবাড়ি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এবং এটিকে বিশেষভাবে পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত করেছিলেন।

কুসংস্কারজীবী প্রসঙ্গে

সমাজে কিছু জীবিকা নির্বাহী মানুষ আছে, যারা কুসংস্কার বিক্রি করে বেঁচে থাকে, যেমন তাবিজ, কবচ, যাদু টোনা, ভুত প্রেত থেকে ঝাড়ফুঁক, এমনকি বন্য প্রাণীর দেহ বা দেহাবশেষ ওষুধ হিসেবে বিক্রি করে। এরাই মূলত কুসংস্কারজীবি। পরিস্থিতির জটিলতায় হয়ত এরা এমন জীবনে এসেছেন, এরা লুম্পেন অনেকটা আর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পুরোটা। মানবতাবাদ শুধু মানুষের মঙ্গল দেখেছে, ফলে মানবতাবাদীর কাছে পণ্য বা মুনাফা খারাপ কিছু নয়। ফলে মানবতাবাদীরা যে কোনো ব্যবসাকেই বৈধ বলে। সেটি যত বিপন্ন প্রাণীর ব্যবসাই হোক না কেন, সেই ব্যবসাও তারা চালাতে চায়।

সামন্তবাদ আর কুসংস্কারের সম্পর্ক একটি আঠালো সম্পর্ক। ফলে একজন কুসংস্কারজীবী কোনোভাবেই সমাজের কাজে লাগে না, কুসংস্কারজীবীরা কলা বা ঝালমুড়ি বেচেও জীবনধারণ করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...