বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের নিপীড়ন

 

পলাতক বম গ্রামবাসী, ১ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের নিপীড়ন একটি নিয়মিত এবং সাধারণ ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারে থাকা সবগুলো সংগঠনই নানাভাবে অন্য জাতি সত্ত্বার লোকদের উপর নিপীড়ন এবং গণহত্যা চালিয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা বিচারের আওতায় না এনে উলটো বিভিন্ন সময় দমনপীড়নকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিশেষত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী ও সাধারণ পাহাড়িদের দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল।
.
এই আইন থাকার পরেও ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান পার্লামেন্টে 'অস্থিতিশীল অঞ্চল বিল' উত্থাপন করেন। এই বিলে অস্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত এলাকার পুলিশ, তৎকালীন বিডিআর ও সেনবাহিনীর নিম্নপদস্থ সদস্যদেরও যে কাউকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার সন্দেহেগ্রেফতার কিংবা গুলি করার ক্ষমতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এমনকি এই বিলের কার্যবিধি ও ক্ষমতাকে কোন বিচার বিভাগীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করার সুযোগও ছিল না। পার্লামেন্টে এই বিল উত্থাপনে সেনাবাহিনীর তৎপরতা উদ্ধত গতি নিয়েছিল। তৎকালীন পার্লামেন্ট সদস্য উপেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এই বিলকে পার্বত্য সমস্যার গণহত্যামূলক সমাধান আখ্যায়িত করেছিলেন। শেষাবধি প্রবল বিরোধিতার মুখে বিলটি পার্লামেন্টে গৃহীত হয় নি।
.
১৯৯২ সালের সন্ত্রাস দমন আইন (CTAA) পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিচার বহির্ভূত কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারিত করে। CHT কমিশনের রিপোর্ট মতে, এই আইনটি প্রনয়ণের দেড় বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আইনের আওতায় ২০০ এর অধিক মামলার বিচারকার্য চালানো হয়েছে। যার অধিকাংশই জনসংহতি সমিতি ও তার অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। এই আইনের সর্বনিম্ন সাজা ৫ বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি ছিল। ১৯৯৫ সালে সরকার আইনটি বাতিল করে।
.
এসব ঘটনা থেকে পার্বত্য সমস্যার সমাধান বিষয়ে শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার হয়ে উঠেস্পষ্টতই একটা বৃহত জনগোষ্ঠির আত্মনিয়ন্ত্রণের (Right of Self-Determination) অধিকার তথা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার প্রশ্নে একটি পশ্চাৎপদ, দমনপীড়নমূলক এবং বিধ্বংসী সামরিক সমাধান খোঁজার দিকেই সবকটি সরকারের নজর ছিল। এ এক অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় পাপ। কেননা মাত্র আগের দশকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বাঙ্গালি জাতির উপর সর্বোচ্চ মানবিক বিপর্যয় আরোপ করে এই প্রকারের ভুলেরই মাশুল দিয়েছিল এবং সেই ঘটনায় নিপীড়িত স্বয়ং বাঙ্গালি জাতিই সেই একই দমনপীড়ন শুরু করেছিল পাহাড়ের অধিবাসীদের উপর। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ থেকে কোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শিক্ষা না নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী চিন্তারই সম্প্রসারণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...