পলাতক বম গ্রামবাসী, ১ ডিসেম্বর ২০২২ |
বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের
নিপীড়ন একটি নিয়মিত এবং সাধারণ ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারে থাকা সবগুলো সংগঠনই
নানাভাবে অন্য জাতি সত্ত্বার লোকদের উপর নিপীড়ন এবং গণহত্যা চালিয়েছে।
লেখক ও কবি অনুপ সাদির এই ব্লগটি তাঁর ছোট ছোট দৈনন্দিন লেখা নিয়ে প্রকাশিত।
পলাতক বম গ্রামবাসী, ১ ডিসেম্বর ২০২২ |
বাংলাদেশে অন্য জাতিসমূহের উপর বাঙালিদের
নিপীড়ন একটি নিয়মিত এবং সাধারণ ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারে থাকা সবগুলো সংগঠনই
নানাভাবে অন্য জাতি সত্ত্বার লোকদের উপর নিপীড়ন এবং গণহত্যা চালিয়েছে।
পুঁজিবাদ যে সমাজ আমাদের সামনে হাজির করেছে,
সেখানে পেশাগত দক্ষতা ও নৈতিকতা বিলুপ্ত হবার পথে। পেশাগত জীবনে একজন অধ্যাপক এবং একজন
ব্যাসের সহায়কের পার্থক্যগুলো এখন ঘুচে যাচ্ছে। অথবা একজন বিজ্ঞানীর সাথে একজন মুদি
দোকানদারের একই আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানাগারে গবেষণাকারী একজন বিজ্ঞানী
যেমন টাকালোভী হয়ে গেছেন তেমনি একজন সরল কৃষক আর সরল নেই, তিনিও লোভে পড়ে বিষক্রিয়ায়
মারা যাচ্ছেন পর্যন্ত।
আমি সব ক্লাসে একটি গল্প বলি, শিক্ষকদের
বুঝতে আপনার কাজে লাগবে। আমরা বাস স্টপে দেখি, বাসের হেলপার চেঁচাচ্ছে, এই আসেন, মতিঝিল
২০ টাকা, ডাইরেক্ট মতিঝিল ২০ টাকা, আসেন সিট আছে খালি ২০, নন স্টপ মতিঝিল ২০ টাকা।
অন্যদিকে একজন শিক্ষক অবিরাম ডেকে চলেছেন,
কেমিস্ট্রি খালি ৫০০ টাকা, ইংরেজি খালি ৫০০ টাকা, ৪ মাসে কোর্স শেষ, প্রতি মাসে খালি
৫০০। আগে আসলে আগে শুরু, জনপ্রতি খালি ৫০০। আর ডাক্তারদের কথা তো বলাই বাহুল্য, ডাক্তার
মানেই দোকান খুলে বসা।
অন্যদিকে আছে ইঞ্জিনিয়াররা, তারা যে কত
ভাবে টাকা পয়সা নয় ছয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তা ভাবা যায় না। এগুলা কয়েকটি পেশার আলোচনা
মাত্র। বাস্তব পুঁজিবাদ এভাবে হাজার হাজার পেশাগুলোকে পুঁজির জোয়ালের নিচে বন্দি করেছে।
বাসের হেলপারের সাথে শিক্ষকের বা ডাক্তারের
পার্থক্য কোথায়? একেবারেই পেশাগত পার্থক্যগুলো ঘুচে গেছে। যেসব শিক্ষক বা ডাক্তার ব্যবসা
করতে পারে না, তারা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকের সাথে ঘোট পাকায়, কমিটি হান
তান ভাউচার লইয়া থাকে।
টাকালোভী মানুষকে বোঝার জন্য, এই পুঁজিবাদী
সমাজকে বোঝার জন্য, এইসব উদাহরণ দেখা যায়। ব্যক্তিগতভাবে দেখলে, আপনি শুধু একটি গাছ দেখতে পাবেন, জঙ্গল দেখতে পাবেন না;
আর শুধু জঙ্গল দেখলে আবার গাছ দেখতে পাবেন না। আপনাকে সার্বিক এবং বিশেষ দুভাবেই দেখতে
হবে। সত্য দেখে এই সমাজকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে শিক্ষকের কাজ, কিন্তু শিক্ষকরা দেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেত্ন নয়। যারা দেখে না, তাদেরকে অন্ধ বলা হয় এই সমাজে।
গোবিন্দ গৌতমকে সশস্ত্র সীমা বল, যা আসলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী,
কাঞ্চনপুর জেলার আনন্দবাজারে হত্যা করেছে ৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে। তিন দিন পর আজ রাষ্ট্রীয়
মর্যাদায় দুধা নদীর তীরে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন
হোলি হওয়া সত্ত্বেও হাজারো মানুষ তাঁর শবযাত্রায় যোগ দেয়।
তাঁর মারা যাবার দিন থেকে তিন দিনে হাজারো মিছিল চলেছে পুরো নেপালে।
কাঠমান্ডুসহ নেপালের সর্বত্র হাজারো মানুষ শ্লোগান দিয়েছে ‘গোবিন্দ গৌতম
অমর হও’, ‘ঘাতকদের ফাঁসি
চাই’। আজ ভিড় ছিলো
নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছে এবং
গুরুতর উদ্বেগের সঙ্গে এই ব্যাপারে ভারত সরকারের উচ্চ কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য ভারতকে উদ্যোগ নিতে বলেছে।
এই পরিস্থিতিতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের কাছে টেলিফোনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
রাজপথে জনতাকে শান্ত করতে গত পরশু নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বিমলেন্দু নিধি গৌতমকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পার্লামেন্টে দেয়া বিবৃতিতে তিনি
গৌতমের পরিবারকে ইতিমধ্যে ১০ লাখ নেপালি রূপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেন এবং তার সন্তানদের
শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, সিপিএন-ইউএমএল-এর জ্যেষ্ঠ নেতা বামদেব গৌতম মঙ্গলবার বলেছেন
যে নেপাল সরকারের উচিত গোবিন্দ গৌতম হত্যার জন্য নেপালের কাছে ভারতকে দুঃখ প্রকাশ করা।
একই সময়ে, গৌতম বলেছিলেন যে ভারতের উচিত শোকাহত পরিবারকে ১০ মিলিয়ন টাকা ক্ষতিপূরণ
দেওয়া।
সুদূর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক পুলিশ অফিসের প্রধান ডিআইজি রোমেন্দ্র
সিং দেউজার মতে, গৌতমের দেহ থেকে গুলিটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং কাঠমান্ডুর পুলিশ সদর
দফতরের অধীন কেন্দ্রীয় পুলিশ ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে কোন বন্দুক
থেকে গুলি করা হয়েছিল তা নির্ধারণ করতে।
ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ প্রতিরোধে গৌতম গোবিন্দের আত্মবলিদানকে শির নিচু
করে গোটা জাতি সম্মান জানিয়েছে। তাঁকে মহান শহীদ হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিক কৃষ্ণ
মহরা লিখেছেন, মাতৃভূমি নেপালের মাটি, সীমানা এবং জায়গা রক্ষায় চির অম্লান হয়ে থাকবে
এই শহীদের আত্মবলিদান।
ঘটনার ছয় দিন পরও সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি এবং আন্তঃসীমান্ত
পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও সম্ভব হচ্ছিল না।
বাংলাদেশের জনগণ কি কিছু শিখবেন এই ঘটনায়?
বাংলাদেশের নদী নিয়ে আমি প্রায় এক যুগ ধরে
কাজ করছি। আমার সম্পাদনায় ২০১০ সালে প্রকাশিত বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা গ্রন্থটি দেশের মৃত আধা মৃত নদীদের
উৎসর্গ করি। এই উৎসর্গটি দেখে পানি বিশেষজ্ঞ জনাব ম ইনামূল হক বলেছিলেন
সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসর্গপত্র।
আমরা ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস
পালন করি। আপনারা অনেকেই নদীর ব্যাপারে কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা হয়ত ভুলে গেছি
নদীতেই থাকে এমন এক প্রাণী যার নাম কচ্ছপ। খুবই নিরীহ গোছের এই প্রাণীগুলো এখন
বাংলাদেশে মহাবিপন্ন। বাংলাদেশে যে মোট ২৯ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায় সেগুলোর ভেতর
পাঁচটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো প্রজাতিই সুখে নেই। বিলুপ্তির প্রহর গুণতে থাকা সুন্দর
নিরীহ এই প্রাণীগুলোকে আমরা কী বাঁচাতে পারি না।
অন্য
প্রসঙ্গে বলি, আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার নদীর তালিকার প্রায় সবগুলো নিবন্ধেই সম্পাদনা করেছি,
প্রায় সবগুলো নিবন্ধ তৈরি করেছি। আপনারা নদীগুলোকে অনেক ভালোবাসেন, সেগুলোকে নিয়ে ভাবেন। আপনারা অনুগ্রহ করে আমাকে নদীগুলো
সম্পর্কে জানাবেন। নদীগুলোর যেসবের চিত্র নেই, সেগুলো উইকিপিডিয়ায় যুক্ত
করবেন। কীভাবে যুক্ত করতে হবে তা বোঝার চেষ্টা করবেন। নদী বাঁচলেই প্রাণ ও প্রকৃতি
বাঁচবে, বাঁচবে মানুষ। কিন্তু সহজে নদী বাঁচবে না, তীব্র রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রয়োজন পড়বে। এবং আমার আস্থা আছে, নদী বাঁচাতে জনগণ লড়বেই।
বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে বলতে গেলেই আসে ফারাক্কা বাঁধের কথা। এটা সম্পর্কে একটাই মন্তব্য, ফারাক্কা বাঁধ গুড়িয়ে দিন। ভারতে বাঁধটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে অনেক মানুষ। পরিবেশবাদীদের সাথে যোগ দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারসহ আরো অনেক সুপরিচিত মুখ।
প্রতিবাদকারীর
আরেকজন হচ্ছেন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী রাজেন্দ্র সিং। তাকে ভারতের ‘ওয়াটারম্যান’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
তিনি ‘ফারাক্কা বাঁধ গুঁড়িয়ে
দেওয়া’র প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি
বলেন, ফরাক্কা হলো বিহারের কাছে অশুভ। এটা একটা
অভিশাপ- যাকে সরানোর প্রয়োজন। কারণ, যতক্ষণ তা না হচ্ছে, ততক্ষণ এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
বাংলা ভাষায় আমরা ইংরেজি শব্দ অহরহ যুক্ত করি। এছাড়াও
বাংলায় অন্য ভাষা যেমন ফারসি ও পর্তুগীজ থেকেও অনেক শব্দ আত্মীকৃত করা হয়েছে।
কিন্তু এসবের খুব একটা প্রয়োজন কোনোকালেই ছিল না, এখনো নেই। চীনের বিভিন্ন ভাষায় র্যাম, হার্ড ডিস্ক, প্রসেসরসহ কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট সব
শব্দেরই নাকি একাধিক চীনা অনুদিত শব্দ আছে। বাংলাতেও সেসব সহজে ব্যবহার করা যেতে
পারে। এজন্য পরিভাষার বিকাশ খুব দ্রুত হওয়া দরকার।
যারা উপনিবেশবাদীদের অত্যাচারের শিকার হয়নি, তারা
স্বাধীনভাবেই নিজ ভাষাকে রক্ষা করে থাকে। আমার যেসব জাতি নয়া উপনিবেশবাদের শিকার
হচ্ছে না, তারাও নিজ ভাষাকে রক্ষা করতে পারছে। চীন এবং নেপাল হচ্ছে এমন দুটি দেশ
যারা নিজেদের ভাষাকে রক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশে উপনিবেশিক নিপীড়নের ফলে আত্মমর্যাদাহীনতার কারণে নিজ ভাষাতে ইংরেজি বা
অন্য ভাষার চিহ্নগুলো বাড়ছে। যেমন, নেপালীরা তাঁদের নিজস্ব ভাষাগুলিতেই কথা বলে।
তাদের নিজ ভাষাগুলোকে তারা মিশ্র ভাষা বা খিচুড়ি ভাষা করেনি। নেওয়ারী ভাষা, নেপালী
ভাষা,
ডোটেলি ভাষা ইত্যাদি সবগুলাই সংস্কৃত জাত, কিন্তু
ওরা বাংলা অঞ্চলের মতো বাংলা আর ইংরেজি মিশ্রিত করেনি।
আমরা চাইলেই কিছু শব্দ বাংলা চালু করা যেত,
পরিভাষাগুলোকে সংস্কার করা যেত, নতুন নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করা যেত। যেমন, নেপালে
ঝোলা শব্দটা খুব চলে, কেউ ব্যাগ বলে না। এখন আমরা বলি টিফিন
ক্যারিয়ার, এটার বাংলা হওয়া দরকার। এটাকে
খাবার ঝোলা বলা যেতে পারে, যদিও টিফিন ক্যারিয়ারে জল থাকে না। জল রাখবার জক বা জগ
নামক পাত্র আছে যাহা পানির পট নামে সমধিক পরিচিত।
তবে বাঙালি মধ্যবিত্ত যেহেতু উৎস থেকেই দাসত্বে
অভ্যস্ত, তাই তাদের কাছে বাংলাটা ঠিক আসে না। তাই আমরা বলছি পরিভাষার গ্রহণ করার
মানসিকতা থাকা চাই সংখ্যাগরিষ্ঠের। ফেসবুক অনুবাদে যখন অনেকে কাজ করতেন, তখন কলেজের
অনুবাদে মহাবিদ্যালয় লিখতেন, কিন্তু অধিকাংশ বাঙালি সন্তান কলেজের অনুবাদে কলেজকেই
ভোট দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আপাতত একটা শব্দই গ্রহণ করেছে, open
university না বলে লোকজন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বলে। এই ওপেন চালু
না হয়ে যে উন্মুক্ত চালু হয়েছে তা থেকেই আমার মনে হয় “বাংলা
শব্দ চালু করলে লোকজন গ্রহণ করবে”। কিন্তু
নতুন শব্দ একটি ভাষায় যখন আসে তখনই তার অনুবাদ করে সেটি চালু করা দরকার। যখন
বাইসাইকেল এসেছিল, সাথে Van ও
এসেছিল, তখনই শব্দ দুইটার বাংলা চালু করলে আজকে ভ্যানের
বাংলা বা বাইসাইকেলের বাংলা খুঁজতে হতো না।
আমি নিজেও একসময় বিশ্ববিদ্যালয় আর মহাবিদ্যালয় লিখতাম।
পরে বাদ দিয়েছি। আমি যখন Utopia নিয়ে লিখি তখন কল্পলোক শব্দটি
দিয়ে করেছিলাম। এখন গুগল অনুবাদ কল্পলোক দেখায়। একেবারেই সাম্প্রতিক কোনো বিদেশি
শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহারের প্রয়োজন হলে, সেই বিদেশি শব্দটির
অনুদিত বাংলা শব্দ চালু করা দরকার।
বাঙালি মধ্যবিত্ত খুব পরিচয় সঙ্কটে ভুগছে, যতদিন আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে না আসবে ততদিন এই ঝামেলা থাকবে। আত্মমর্যাদা
বলে যদি কিছু থেকে থাকে তা বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ই লালন করে না মনে হয়। এরা
একেক সময় একেক পরিচয় ধারণ করে, মোগল আমলে ছিল তুর্কি পাঠান
মোগল বা আশরাফ, ব্রিটিশ আমলে [কলকাতার] বাবু বা সাহেব,
পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তানি এখন আগে বাঙালি না আগে মুসলমান/ হিন্দু।
এইসব পরিচয় সংকটের ফলে মধ্যবিত্তের পরিচয় সংক্রান্ত ঝামেলাটি আছে। আর ভাষার লিখিত
রূপ তো মধ্যবিত্তেরই।
ফেব্রুয়ারি আসছে। টিফিন ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে আরেকটু কথা
বলা যায়। বাঙলায় পেঁটরা, পুটলি, ঝোলা এবং
থলে–এই চারটা শব্দ ছিলো। এখনকার
পোলাপান এই শব্দগুলা একটাও চিনবে বলে মনে হয় না। অথচ এইগুলাকে যদি box বা Carrier-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত তাইলে বাংলা
শব্দগুলা বাঁচত। কিন্তু হয়েছে কী তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ইউরোপে Structuralism
বলে একটি মতবাদ ১৯৬০-এর দশকে ছিলো। সেটি শব্দগুলোর অর্থ নির্দিষ্ট
করে দেয়। আমাদেরও সেরকম বিদেশি শব্দগুলার ক্ষেত্রে দেশি কোন শব্দটা ব্যবহার করা
হবে তা ঠিক করে দিয়ে প্রচারমাধ্যমে সেই শব্দগুলা চালু করলেই হবে। বাংলা পরিভাষার
জয় হোক।
ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার অনুরূপতাই সত্য।
এধরনের অনুরূপতা সাধারণত আংশিক ও সন্নিকটবর্তী হয়। কোন সত্যকে আমরা প্রতিষ্ঠা
করতে পারি তা সব সময়েই সত্য আবিষ্কার করার ও তাকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের হাতে
যে উপায়গুলি আছে তাদের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু তারই সঙ্গে এই অর্থে আপেক্ষিক হলেও ধ্যান-ধারণার
সত্যতা সেই সমস্ত নৈর্বক্তিক তথ্যের
ওপর নির্ভর করে যাদের সঙ্গে ঐ ধ্যান-ধারণার সাদৃশ্য রয়েছে। আমরা কখনোই পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ বা চরম সত্যকে জানতে
পারি না, কিন্তু সর্বদা তার দিকেই এগিয়ে চলেছি।
ট্রুথ অর্থে সত্য শব্দটি প্রাচীন দাস যুগ থেকেই আছে। আর সমস্ত
চিন্তারই শ্রেণি চরিত্র আছে। আর বিজ্ঞান দাস যুগে ছিলো, সামন্তযুগে পিছিয়ে গেছিল, তখন আলকেমি এবং আরো কিছু ব্যাপার ছিলো, তবে বিজ্ঞান ছিলো না মনে হয়। বিজ্ঞানকে
বুর্জোয়ারা পুনরায় বাঁচিয়ে তোলে।
মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা বিজ্ঞানকে অধীন করে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের, মাওবাদীরা অধীন করে দ্বন্দ্ববাদের। আর দর্শন হচ্ছে
প্রকৃতি-বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের
ঘনীভূত রূপ। ফলে শুধু বিজ্ঞানের পূজারিরা
এখন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক হতে
বাধ্য। একটি মজার প্রসঙ্গ, মোহনদাস গান্ধীর মতো পাজীর আত্মজীবনীর নাম “মাই
এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ”।
চরম ও আংশিক সত্য
আমরা দেখেছি যে, ধ্যান-ধারণার বিকাশে হরেক
রকমের অধ্যাসের যেমন উদ্ভব হয়, তেমনি সত্যেরও আবির্ভাব ঘটে।
তাহলে সত্য বস্তুটি কী? এটি হলো ধ্যান-ধারণা ও নৈর্বক্তিক বাস্তবতার মধ্যে অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য।
আমাদের ধ্যান-ধারণা ও
বাস্তবতার মধ্যে এই অনুরূপতা, ঐক্য বা সাদৃশ্য কিন্তু একমাত্র ধীরে ধীরেই প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং তাও আবার প্রায়শঃই আংশিক ও অসম্পূর্ণ অনুরূপতা, ঐক্য বা
সাদৃশ্যের বেশি নয়। কারণ, একটি ধারণা বা ভাব সমস্ত দিক
থেকেই তার বাস্তব বিষয়ের অনুরূপ নাও হতে পারে, কিন্তু আংশিক
অনুরূপ হতে পারে; আবার ঐ বিষয়ে এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে
যা ধারণায় আদৌ স্থান পায় না, যার ফলে ধারণা ও তার নৈর্বক্তিক বস্তুর অনুরূপতা অসম্পূর্ণ
থেকে যায়। এইসব ক্ষেত্রে অবশ্য একথা আমাদের বলা উচিত নয় যে আমাদের ধারণাটাই ভুল
ছিল, কিন্তু
তাহলেও তা সর্বাংশে, সম্পূর্ণভাবে চরম সত্য বলে বিবেচিত হবে
না। অতএব, সত্য এমন কোনো সম্পত্তি নয় যে একটি ধারণা বা
প্রতিজ্ঞা, হয় তার অধিকারী, নয় তো তা
নয়; একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট
সীমার মধ্যে এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই সত্য একটি ধারণার উপাদান হতে পারে।
তথ্যসূত্র
১. মরিস কর্নফোর্থ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, অনুবাদ ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, প্রকাশকাল নভেম্বর ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৫৩২-৫৩৩।
১. সাম্যবাদ ব্যক্তিমালিকানাকে অস্বীকার করে থাকে। কিন্তু সকল ধর্মই সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করে।
২. সাম্যবাদ বলে
বস্তুর বিকাশের ফলে চেতনা এসেছে, ধর্ম উল্টোভাবে বলে যে চেতনা থেকে বস্তু
এসেছে পরম চেতনা সব বস্তু তৈরি করেছে।
৩. সাম্যবাদ নারী-পুরুষে
ভেদ করে না, কিন্তু বেশিরভাগ ধর্ম নারী-পুরুষের
সামাজিক-রাজনৈতিকসহ বহু বিভেদ তৈরি করে। কিছু ধর্ম তো নারীকে বুদ্ধিহীন প্রাণী
হিসেবেই উপস্থাপন করে।
৪. সাম্যবাদ মুনাফা
ও বৈষম্যের বিরোধী, কিন্তু ধর্ম মুনাফার স্বীকৃতি দেয় এবং
ধনী-গরিবের বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখে।
৫. সাম্যবাদ বলে, এই পৃথিবীতেই লড়তে হবে, ধর্ম বলে পরকালের আশায় বসে থাকো।
কুসংস্কার (ইংরেজি: Superstition) হচ্ছে এমন কোনো বিশ্বাস বা
অনুশীলন যা অ-চর্চাকারীদের দ্বারা অযৌক্তিক বা অতিপ্রাকৃত
বলে বিবেচিত হয়, যেটি ভাগ্য বা জাদু, অনুভূত
অতিপ্রাকৃত প্রভাব বা অজানা ভয়ের জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ভাগ্য,
তাবিজ, জ্যোতিষশাস্ত্র, কপাল
বলার, আত্মা এবং কিছু অলৌকিক সত্তাকে ঘিরে বিশ্বাস এবং
অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ করে এই বিশ্বাস
যে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি নির্দিষ্ট (আপাতদৃষ্টিতে) সম্পর্কহীন পূর্বতন ঘটনাগুলির দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে।
এছাড়াও, কুসংস্কার শব্দটি প্রায়শই এমন একটি ধর্মকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যা একটি
প্রদত্ত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা অনুশীলন করা হয় না; যদিও
সেটা প্রচলিত ধর্ম হিসেবে টিকে থাকে এবং সংখ্যা গরিষ্ঠরা সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে
দেখে অথবা ধর্মবিরোধীদের দ্বারা সমস্ত ধর্মের জন্য সেটাকে কুসংস্কার হিসেবে দেখানো
হয়। মধ্যযুগীয় বর্বর ইউরোপে
কুসংস্কার হিসাবে বিকল্প ধর্মীয় বিশ্বাস
একটি প্রদত্ত সংস্কৃতিতে সাধারণভাবে গৃহীত ধর্ম থেকে ভিন্ন ধর্মীয় অনুশীলনকে
কখনও কখনও কুসংস্কার বলা হয়; একইভাবে, একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আনা নতুন
অনুশীলনগুলিকে বাদ দেওয়ার প্রয়াসে নতুন অনুশীলনগুলোকে কুসংস্কার হিসাবে চিহ্নিত
করা যেতে পারে। একইভাবে, ভক্তির অত্যধিক প্রদর্শনকে প্রায়ই কুসংস্কারপূর্ণ আচরণ
হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রাচীনকালে, ল্যাটিন superstitio শব্দটি, এর সমতুল্য গ্রীক deisidaimonia
শব্দটির মতো,
অতিরঞ্জিত আচার
এবং ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণ মনোভাবের সাথে যুক্ত ছিল। গ্রীক এবং
রোমান বহুঈশ্বরবাদীরা, যারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক শর্তে দেবতার সাথে তাদের
সম্পর্কের মডেল তৈরি করেছিল, সেই ব্যক্তিকে তিরস্কার করত যে ক্রমাগত দেবতাদের চিন্তায়
ভয়ে কাঁপত, যেমন একজন ক্রীতদাস একজন নিষ্ঠুর এবং খামখেয়ালী প্রভুকে
ভয় পায়। দেবতাদের প্রতি এমন ভয়কেই রোমানরা ‘কুসংস্কার’রূপে
বোঝাত (Veyne 1987, p. 211)। দিদেরো তাঁর Encyclopédie-তে কুসংস্কারকে “সাধারণভাবে
ধর্মের যে কোনো বাড়াবাড়ি”
হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এবং এটিকে বিশেষভাবে পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত করেছিলেন।
কুসংস্কারজীবী প্রসঙ্গে
সমাজে কিছু জীবিকা নির্বাহী মানুষ আছে, যারা কুসংস্কার
বিক্রি করে বেঁচে থাকে, যেমন তাবিজ, কবচ, যাদু টোনা, ভুত প্রেত থেকে ঝাড়ফুঁক, এমনকি বন্য প্রাণীর
দেহ বা দেহাবশেষ ওষুধ হিসেবে বিক্রি করে। এরাই মূলত কুসংস্কারজীবি। পরিস্থিতির জটিলতায় হয়ত এরা এমন জীবনে এসেছেন, এরা লুম্পেন অনেকটা আর পরিবেশের জন্য
ক্ষতিকর পুরোটা। মানবতাবাদ শুধু মানুষের মঙ্গল দেখেছে, ফলে মানবতাবাদীর কাছে পণ্য বা মুনাফা খারাপ
কিছু নয়। ফলে মানবতাবাদীরা যে কোনো ব্যবসাকেই বৈধ
বলে। সেটি যত বিপন্ন প্রাণীর ব্যবসাই হোক না কেন, সেই ব্যবসাও তারা চালাতে চায়।
সামন্তবাদ আর কুসংস্কারের সম্পর্ক একটি আঠালো
সম্পর্ক। ফলে একজন কুসংস্কারজীবী কোনোভাবেই সমাজের কাজে লাগে না, কুসংস্কারজীবীরা কলা বা ঝালমুড়ি বেচেও জীবনধারণ করতে পারে।
সিটিসেল নামে ব্যবসা করেছে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মোবাইল অপারেটর। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ও দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগামী টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক কোম্পানি যা শ্রীলঙ্কার ইতিসালাত ও পাকিস্তানের পাকটেলের মতোই বাংলাদেশে প্রথমে ব্যবসা আরম্ভ করে। এটি দেশের একমাত্র মোবাইল অপারেটর যা সিডিএমএ এবং ইভিডিও প্রযুক্তি ব্যবহার করত। আগস্ট ২০১৬ পর্যন্ত সিটিসেলের মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার।
আমার
ব্যক্তিগত জীবনের একটি অংশ জুড়ে আছে এই সিটিসেল। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ছাইরঙা ছোট এন্টিনার সেট
কিনে সিটিসেলের গ্রাহক হই। সেইটিতে যে রিম ছিলো তা পোস্টপেইড। যখন গেঁড়ামিন নামক
বাটপার অপারেটরটায় সাত টাকা মিনিট কথা বলতে হতো তখন আমি কথা বলতাম সাড়ে তিন টাকায়।
ফলে তখন কথা বলেছি অনেক, আমার সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনের ৫০০-৭০০ টাকা চলে যেত কথা বলতে। আমার
কলিগ পর্যন্ত আমার সেই সিটিসেলেই কথা বলতো। তাঁর যুক্তি ছিলো আমারটায় কম রেট!
আমি সিটিসেল কিনেছিলাম তাঁর
কারণ আমার বড় ভাইয়ের প্রথম সেটটিও সিটিসেল ছিলো। তাঁর সেটটিতে কোনো রিম ছিলো না। ভাইয়ের ফোনটির দাম ছিলো প্রায় ১০ হাজার
টাকা। এরপর বিভিন্ন সময় সিটিসেলের কলরেট কমতে থাকে। কমতে কমতে একসময় সিটিসেল টু
সিটিসেল ২৯ পয়সা মিনিটে এসে থামে। যাদের সাথে বেশি কথা বলতে হয় তাঁদেরকে আমি একটি
করে ৯৯০ টাকার সেট গিফট করতে থাকি। এরকমভাবে আমাদের পুরো পরিবার হয়ে যায় সিটিসেল
পরিবার।
সিটিসেল দিয়ে তারুণ্যের
উত্তাল দিনগুলোতে পেয়েছি বন্ধুত্ব,
প্রেম, মুগ্ধতা। এই সিটিসেলে কথা বলেই
খুঁজে পেয়েছিলাম আমার পরমাত্মীয়টিকে। পুরনো সিটিসেল বন্ধ হওয়া তাই ছিলো
আনন্দ-বেদনার সাথে জড়িয়ে।
নির্মলেন্দু গুণ মোবাইলের বার্তা
বক্সে লিখেছিলেন মুঠোফোনের কাব্য, আর আমি লিখেছিলাম প্রায় ৩০০টি প্রেমবার্তা। তখন দশ-বিশ মিনিটে চার-পাঁচ
লাইনের কবিতা লিখে ফেলতাম।
সিটিসেল বন্ধ হলো যেদিন
মহামহিম তাঁড়ানা আপা আঙ্গুলের ছাপ্পা নিতে শুরু করলেন। আমরা আর কেউই সিটিসেলের
জন্য ছাপ্পা দিলাম না। তখনো দেখি পরিবারের একজন সদস্য সিটিসেলটির জন্য ছাপ্পা
দিয়েছেন।
সবাই সিটিসেল বর্জন করলেও
আমি শেষ পর্যন্ত বর্জন করতে পারিনি। বাটপার গেঁড়ামিন আমি জীবনে একবছরও ব্যবহার
করতে পারিনি। আর বদমাশ বাংলালিংক ব্যবহার করতাম বিকল্প নম্বর হিসেবে। পকেটে একটি
সিটিসেল সেট রাখতাম ২০১৫ সালেও। আর সিটিসেল সস্তায় যে ইন্টারনেট সেবা দিত তা কখনই
ভুলবার নয়।
ছাত্র থাকাকালীন মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সংস্পর্শে আসেন। তার ফলশ্রুতিতে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তিনি তৎকালীন গোপন বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। তাঁদের চেষ্টায় পার্শ্ববর্তী সাটিরপাড়া গ্রামে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা লাঠি, ছুরি এবং ড্রিল নিয়ে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য নিয়মিত জড়ো হতে থাকেন। প্রমথনাথ মিত্র যুবকদের বলেছিলেন যে বিদেশী পণ্যের বিরুদ্ধে পিকেটিং দিয়ে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না, যা শুধুমাত্র সহিংস বিদ্রোহ দ্বারা স্বাধীনতা অর্জন করা যেতে পারে; তাই দলে দলে নিজেকে সংগঠিত করতে হবে। তাই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরেন।
সতীশ পাকড়াশী ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। ঐ বছরই অস্ত্র আইনে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করা আরম্ভ করেন। মুক্তি পেয়ে নরসিংদীতে ফিরে এসে আবার গোপন দলের কাজে যোগ দেন। তাকে মালদহে পাঠানো হয়। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা যান। তৎকালীন আধুনিক বর্বর ব্রিটিশ সরকার একাধিক রাজনৈতিক ডাকাতির অপরাধে তার নামে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় পুলিশের দমননীতির জন্যে সহকর্মী নলিনীকান্ত বাগচীর সাথে আত্মগোপনে চলে যান। সমিতির আরো কয়েকজন সদস্যসহ তারা আসামের গৌহাটিতে গিয়ে সেখান থেকে সারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবের কাজ পরিচালনা করতে থাকেন। পুলিশ ১২ জানুয়ারি ১৯১৮ তারিখে তাদের গোপন আস্তানা ঘিরে ফেললে তারা ৭ জন নিকটের নবগ্রহ পাহাড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং পুলিশবাহিনীর সাথে রিভলভার নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। ৫ জন ধরা পড়লেও তিনি ও নলিনীকান্ত বাগচি পালাতে সক্ষম হন। দুজনেই পদব্রজে কলকাতায় চলে যান। নলিনীকান্ত বাগচি এই ঘটনার কিছুকাল পরেই ঢাকা শহরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।
সতীশ পাকড়াশী ১৯১৮ সালে কলকাতায় ধরা পড়লে প্রথমে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেল ও পরে রাজশাহী জেলে বন্দি করে রাখা হয়। তিন বছর পরে তিনি মুক্তি পান। ১৯২৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আগত অবনী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাকে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে সমিতি, তবে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং রাজবন্দী হিসেবে ৫ বছর জেল খাটেন। এই সময় তিনি আলিপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা, মহারাষ্ট্রের যারবেদা এবং কর্ণাটকের বেলগাঁও জেলে বন্দি থাকেন। ১৯২৯ সালে মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার হন। তাকে আন্দামান সেলুলার জেলে দ্বীপান্তর করা হয়। ১৯৩৩ থেকে পরবর্তী ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দি থাকেন। এই সময় তিনি সাম্যবাদে আকৃষ্ট হন। তার জীবনের ৩২ বছর কারান্তরালে কেটেছে। ১১ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন।
সেলুলার জেলে কমিউনিস্ট কনসলিডেশনের সদস্য ছিলেন। জেলখানায় সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কারামুক্তির পর ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। পার্টি নিষিদ্ধ হলে আত্মগোপন করেন। বক্সা দুর্গে বন্দী ছিলেন অন্যান্য সাম্যবাদী বিপ্লবীদের সাথে। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)তে যোগ দেন। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে মারা যান।
২০০৬-০৭ সাল হবে, নরসিংদী গেছি। নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা একদিন বিকেলে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেন। এদিক-সেদিক এই রাস্তা সেই রাস্তা ঘুরিয়ে কোনো এক গ্রামের একটি বিশাল বটগাছের পাশে গাড়ি দাড় করালেন। গাছের থেকে একটু দূরে ঝোপঝাড়ের মাঝখানে এক পুরনো মন্দির। তিনি এরকম এক জায়গায় দাড়িয়ে বললেন, এই অঞ্চলে ৪০-৫০ বছর আগেও ঘন জংগল ছিলো, এসব জায়গায় লুকিয়ে থাকতেন সে সময়ের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীরা। সতীশচন্দ্র পাকড়াশী নামে এক বিপ্লবী পাশেই জন্মেছিলেন। তিনি এসব জায়গায় লুকিয়ে থেকেই কাজ করতেন।
সেই থেকে চিনি তাঁকে। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশীর প্রতি। আজ বাংলাদেশে অজস্র তুচ্ছ আর ইতরেরা মহামহিম সেজেছে মুখোশের আড়ালে, অথচ এই বিপ্লবীদের কে মনে রেখেছে?
Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...