সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

ভ্লাদিমির লেনিনের পুস্তক-আলোচনা ও লেনিনবাদের রূপ


মার্কসবাদী শ্রেণিসংগ্রামের স্বীকৃতিকে প্রসারিত করে প্রলেতারীয় একনায়কত্বের স্বীকৃতিতে
কী করতে হবে? আমাদের আন্দোলনের জরুরি প্রশ্নগুলি, (ইংরেজিতে: What Is to Be Done? Burning Questions of Our Movement) হচ্ছে লেনিনের লেখা বই যা ১৯০১ সালে লিখিত এবং ১৯০২ সালে প্রকাশিত এটি একটি রাজনৈতিক প্রচারপুস্তিকা যার শিরোনাম নেয়া হয় উনিশ শতকের রুশ বিপ্লবী নিকোলাই চেরনিশেভস্কি (১৮২৮-৮৯) লিখিত একই নামের উপন্যাস থেকে। পার্টি গঠনে এই বইয়ের ভূমিকা ছিল বিশাল। এতে তিনি প্রলেতারিয় মার্কসবাদী পার্টি গঠনের পরিকল্পনা ও তার রণকৌশলের বুনিয়াদ বিশদভাবে উপস্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন। লেনিনের মত ছিলো এপার্টিকে হতে হবে আগাগোড়া বিপ্লবী, নতুন ধরনের সংগ্রামী পার্টি। এই বইখানি ‘অর্থনীতিবাদের’ ভাবাদর্শগত গোরখোদকের কাজ সুসম্পন্ন করে। 
এক পা আগে, দুই পা পিছে হচ্ছে লেনিন লিখিত ১৯০৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এমন একটি বই যেখানে তিনি মেনশেভিকদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে নামা এবং পার্টির পক্ষে, রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলনের পক্ষে মেনশেভিকবাদের বিপদসমূহকে বিশ্লেষণ করে দেখান। এতে লেনিন পার্টি জীবনের কঠোর মান ও পার্টি পরিচালনার নীতি রচনা করেন। এতে ছিলো পার্টির সব সদস্যের দ্বারা কঠোরভাবে নিয়মসমূহ পালন, একক পার্টি শৃঙ্খলা, সংখ্যাগুরুর কাছে সংখ্যাল্পের ও উচ্চতর সংগঠনের কাছে নিম্নতর সংগঠনের কাছে নতি স্বীকার, পার্টি সংস্থাগুলির নির্বাচন ও জবাবদিহির বাধ্যতা, পার্টি সদস্যগণের সক্রিয়তা, আত্মউদ্যোগ ও আত্মসমালোচনার বিকাশ।   
গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল (১৯০৫) লেনিন লেখেন ১৯০৫ সালের জুন-জুলাই মাসে এবং বইটি বের হয় জেনেভা থেকে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্করণে; তখন লেনিন সেখানে থাকতেন এবং কাজ করতেন। সেই ১৯০৫ সালেই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক এবং আলাদাভাবে মস্কো কমিটি কর্তৃক দশ হাজার সংখ্যায় বইখানা আবার পুনর্মুদ্রিত হয়। ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিটার্সবুর্গ প্রেস কমিটি বইখানায় প্রকাশিত ভাব-ভাবনাকে জার সরকারের বিরোধী অপরাধজনক কার্য বিবেচনা করে সেটিকে নিষিদ্ধ করেছিল এই বইয়ে লেনিন দেখান সশস্ত্র অভ্যুত্থান হচ্ছে জারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের নির্ধারক উপায়। প্রলেতারিয়েত ও কৃষকসম্প্রদায়ের ক্ষমতা অর্থাৎ বিপ্লবী গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব কায়েম করতে হবে; আগের বিপ্লবগুলোতে যা হয়েছে সেভাবে বিজয়ী অভ্যুত্থান থেকে বুর্জোয়ার ক্ষমতা স্থাপন চলবে না। অথচ মেনশেভিকরা মনে করত ক্ষমতা নেবে বুর্জোয়ারা, শ্রমিক শ্রেণির কর্তব্য হলও তাদের সমর্থন করা।  
বস্তুবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদী সমালোচনা (ইংরেজিতে: Materialism and Empirio-Criticism) লেনিন লেখেন ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি-অক্টোবর মাসে যেখানে তিনি মার্কসবাদী দর্শনের বিরোধীদের স্বরূপ উদঘাটন করেন। তিনি এই গ্রন্থে আরো দেখান যে দর্শন ও রাজনীতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বর্তমান।
জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের আধিকার, ইংরেজিতে “The Right of Nations to Self-Determination, হচ্ছে লেনিনের ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মে মাসে লিখিত এবং এপ্রিল-জুন মাসে Prosveshcheniye জার্নালে প্রকাশিত প্রকাশিত একটি রাজনৈতিক প্রচারপুস্তিকা। এই প্রচারপুস্তকে এবং ‘জাতীয় সমস্যায় সমালোচনামূলক মন্তব্য’ নিবন্ধে লেনিন জাতীয় প্রশ্নের মার্কসবাদী কর্মসূচি এবং বলশেভিক পার্টির জাতীয় নীতি বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন।
সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়  (ইংরেজিতে: Imperialism, The Highest Stage of Capitalism) হচ্ছে ১৯১৬ সালের জানুয়ারি-জুন মাসে  লেনিনের লিখিত বই যেটি তিনি লেখেন জুরিখে বসে পারুসপ্রকাশালয়ের জন্য। এই গ্রন্থে লেনিন দেখালেন যে বিশ শতকের শুরু নাগাদ পুঁজিবাদ তার বিকাশের নতুন পর্বে, সাম্রাজ্যবাদের পর্বে প্রবেশ করেছে।
রাষ্ট্র ও বিপ্লব (ইংরেজিতে: The State and Revolution) হচ্ছে ১৯১৭ সালের লেনিন লিখিত এমন আরেকটি বই যেখানে সমাজে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিপ্লব অর্জনে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পথে সমাজ গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক অপর্যাপ্ততার বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থকে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের ওপরে লেনিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে এবং লুসিও কোলেত্তি এটিকে বলেছেন “রাজনৈতিক তত্ত্বে লেনিনের মহত্তম অবদান” মার্কসবাদী তাত্ত্বিক David McLellan-এর মতানুসারে, the book had its origin in Lenin's argument with Bukharin in the summer of 1916 over the existence of the state after a proletarian revolution. Bukharin had emphasised the 'withering' aspect, whereas Lenin insisted on the necessity of the state machinery to expropriate the expropriators. In fact, it was Lenin who changed his mind, and many of the ideas of State and Revolution, composed in the summer of 1917 - and particularly the anti-Statist theme - were those of Bukharin.  
প্রলেতারিয় বিপ্লব ও দলদ্রোহী কাউৎস্কি হচ্ছে ১৯১৮ সালের অক্টোবরে লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি সুবিধাবাদের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানেন। বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে বিশুদ্ধ ও শ্রেণিবহির্ভূতবলে দেখাবার যে চেষ্টা কাউৎস্কি করেছিলেন, এ পুস্তকে লেনিন তার অযৌক্তিকতা খুলে দেখান
কমিউনিজমে ‘বামপন্থা’র শিশু রোগ হচ্ছে ১৯২০ সালে লেনিন লিখিত বই যেখানে তিনি বলশেভিক পার্টির সৃষ্টি, বিকাশ, সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন১৯০৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বলশেভিকবাদের ব্যবহারিক কাজের ইতিহাসের নানান ধরন সম্পর্কে লিখেছেন। অর্থাৎ রুশদেশে লেনিনের বিপ্লবী নীতি ও কৌশলের নানা রূপ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির কর্তব্যের নানা দিক ব্যাখ্যাত হয় এই গ্রন্থে। লেনিনবাদি কৌশল বলতে আজ আমরা যা বুঝি তার রূপ রয়েছে এই বইতে।
তথ্যসূত্র:
১. এই নিবন্ধের প্রায় সব তথ্যই গ. দ. অবিচকিন ও অন্যান্য; ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, সংক্ষিপ্ত জীবনী; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭১ থেকে নেয়া হয়েছে
২. ভি. আই. লেনিন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-১৩৫।
৩. ভি. আই. লেনিন, সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদীদের প্রসঙ্গে; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; তারিখহীন; পৃষ্ঠা-১৯১।
৪. L. Colletti, From Rosseau to Lenin (London and New York, 1972, p.224)
৫. David Mclellan Marxism after Marx, 1979, New York: Harper and Row, p.98. For Lenin's considerable debt to Bukharin, see S. Cohen Bukharin and the Bolshevik Revolution (New York, 1973, pp.25ff; 39ff)

রবিবার, মার্চ ২৩, ২০১৪

গো বগা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি


গো বগা, Cattle Egret, Photo: Kiron Khan, Bangladesh
বৈজ্ঞানিক নাম/Scientific Name: Bubulcus ibis (Linnaeus, 1758)
সমনাম: Ardea ibis, Linnaeus, 1758 
বাংলা নাম: গো বগা, গো বক(আলী)
ইংরেজি নাম/Common Name: Cattle Egret.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Animalia
বিভাগ: Chordata
শ্রেণী: Aves
পরিবার/Family: Ardeidae
গণ/Genus: Bubulcus, Bonaparte, 1855;
প্রজাতি/Species Name: Bubulcus ibis (Linnaeus, 1758)
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকাBubulcus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ১টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতেও ১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে ও পৃথিবীতে প্রাপ্ত প্রজাতিটি হলো গো বগা
বর্ণনা: গো বগা হলদে ঠোঁট সাদা দেহের চারণভূমির পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ৫১ সেমি,  ওজন ৪৬০ গ্রাম, ডানা ২ সেমি, ঠোঁট . সেমি, পা . সেমি, লেজ সেমি। ৩টি উপপ্রজাতির মধ্যে B. i. coromandus বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: গো বগা মাঠ, জলা, মিঠাপানির বাদা, চারণভূমি, গবাদি পশুর খোঁয়াড়, বিল, হ্রদ, নদী, জলাধার, খাল, প্যারাবন, প্লাবনভূমি, খোলা বন ও ধানখেতে বিচরণ করে
বিস্তৃতি: গো বগা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সব বিভাগের সব জলাশয়ে পাওয়া যায়। ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পুরো ভারত উপমহাদেশসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে ও বিশ্বে বিপদমুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

. বাংলাদেশের পাখির তালিকা  

. বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকা

৩. বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ভিদের একটি বিস্তারিত পাঠ

৪. বাংলাদেশের ফলবৈচিত্র্যের একটি বিস্তারিত পাঠ

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...