নিবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নিবন্ধ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, মে ০১, ২০১৩

শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব ও বাংলাদেশের লাশ হওয়া শ্রমিকগণ


নুপুর পায়ে নিহত বস্ত্রবালিকা

বাংলাদেশের শ্রমিকগণ আগুনে পুড়ে, অট্টালিকা ধ্বসে, দুর্ঘটনায়, পানিতে ডুবে, অপুষ্টিতে মারা যানকারখানা শ্রমিকদের এই নিয়তি পালটাতে হলে আমাদের সম্মুখে একটিই সমাধান রয়েছে এবং সেটি হলও শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব কায়েম করাকিন্তু সেটির ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে চিনের প্রাচিরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বুর্জোয়াশ্রেণির একনায়কত্বগত ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ বাংলাদেশের সাভারে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যায় প্রায় ২০০০ শ্রমিককে হত্যা করা হয়
সপ্তাহখানেকের উদ্ধারে লাশ পাওয়া গেলো চারশআহত হলও ২৫০০বিদেশি প্রচারমাধ্যমগুলোতেও মৃতের ও নিখোঁজের সংখ্যা ১৫০০-এর বেশি বলা হয়েছেসারা দেশবাসি ক্ষুব্ধলাশ উদ্ধার তো হলই না লাশ গুম করা নিয়ে স্বজনেরা সর্বদাই তটস্থ থেকেছেনসারাদেশের শ্রমিক-কৃষক কেঁদে চলেছেন শেষ লাশটির জন্যঅথচ এই রাষ্ট্রযন্ত্র লাশের অধিকার পর্যন্ত ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেএইরকম অবস্থায় শ্রমিক-কৃষকদের পক্ষে দাড়ানো যে কোনো শ্রমিকশ্রেণির দলগুলোসহ যে কোনো মানুষের পক্ষেই জরুরি ছিলোকিন্তু দেশবাসি দেখলো অন্য ব্যাপারঘটনার পরপরই বামমোর্চা, সিপিবি ও বাসদ গণহত্যাকারিদের শাস্তি ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে হরতাল ঘোষণা করেছিলেনকয়েক ঘণ্টা পরে বিএনপিও হরতাল ডেকেছিলো
আর মালিকদের চাপে জনশত্রুদের একাংশ লীগ হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলো এবং অন্য অংশ বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার করেছিলোএরপর শ্রমিকশ্রেনির নামধারী সিপিবি নামক পেটি-বুর্জোয়াদের পার্টিটিও হরতাল থেকে সরে গিয়েছিলো১ মে, ২০১৩ বামমোর্চা এবং বাসদও হরতাল প্রত্যাহার করে নেয় অর্থা ২০০০ শ্রমিককে হত্যা করা হলেও বাংলাদেশে শ্রমিক শ্রেণির দলগুলো ন্যায্য দাবিতে হরতাল দিয়ে নিজেদের দৃঢ় মনোভাব বজায় রাখতে পারেন নাহে মহান শ্রমিকগণ, তোমাদের জন্য বাংলাদেশে এখন আর কে আছে?
অথচ গতকাল ৩০ এপ্রিল, ২০১৩তেও আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইলে শ্রমিকগণ রাস্তায় ছিলেন২৪ এপ্রিলের পরে সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুরে প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকগণ সহিংস বিক্ষোভ করেছেন২৬ এপ্রিলে চট্টগ্রামে শ্রমিকগণ মিছিল থেকে গাড়ি ভাংচুর পর্যন্ত করেছিলেনএমনকি ঘটনার পরপরই শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে সরকার ও মালিকরা ভীত হয়ে বিজিবি পর্যন্ত মোতায়েন করেছিলো
শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়ানো যেতে পারে কেবলমাত্র শ্রমিকদের রাষ্ট্র কায়েম করার মাধ্যমেই। কিন্তু এখনো যদি শ্রমিক শ্রেণির দলগুলো গত চল্লিশ বছরের লুটপাটে গড়ে ওঠা লোভী, পিশাচ, নিষ্ঠুর, নির্দয়, মুনাফাখোর, ব্যবসামনস্ক মধ্যবিত্তের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে তবে শ্রমিকমুক্তি ঘটতে এদেশে বহু দেরি আছে।
দুই প্রধান রাজনৈতিক দল লিগ-বিএনপি তখনই বাংলাদেশ থেকে বাতিল হবে যখন কমিউনিস্টরা দির্ঘমেয়াদি কর্মসূচি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব কায়েম করবেন। কিন্তু হয়তো আজ বাংলাদেশে সেই লক্ষণ আদৌ নেই, কিন্তু লক্ষণ দেখা দিতে কতক্ষণ। আমরা মনে করি বাংলাদেশের শ্রমিকের জন্য রয়েছে এই শ্রমিক বিপ্লবেই সমাধান এবং তারাই বিপ্লবের নিজস্ব শক্তি।
আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিল্পশ্রমিক পেতে সবচেয়ে কম মজুরি দিতে হয়অর্থা সবচেয়ে সস্তা শ্রম এখন বাংলাদেশে সস্তায় শ্রম শোষণ করতে করতে সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশকে শ্রমিকের জন্য অগ্নিকুণ্ড বানিয়েছেএমতাবস্থায়, আমরা শুধু বলতে পারি মুক্ত করো এই আগুন বর্বরতা থেকে হে মহান শ্রমিকগণ, কর্তৃত্ব গ্রহণ করো।

শুক্রবার, এপ্রিল ১২, ২০১৩

উইন্ড্যাম ল্যুইস ও শেক্সপীয়ার


উইন্ড্যাম ল্যুইস শিল্পের জন্য শিল্পের চেয়ে মানুষের জন্য শিল্পের দিকেই বেশি ঝোঁক দেখিয়েছেন। তিনি মানতেন যে অতীত লেখকদের উদাহরণ ছাড়া শিল্প সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম অসম্ভব।  

আমাদের আলোচ্য লেখকের একটি বইয়ের নাম শিল্প ছাড়া মানুষ[১]। এই লেখক সম্পর্কে আধুনিকতাবাদী কবি সুধিন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন,
“তাঁর বক্তব্যে তর্কের অবকাশ আছে বটে, কিন্তু শুভ বুদ্ধির অভাব নেই।”[২]   

মহাকবি শেক্সপীয়রকে যখন কিছু যান্ত্রিক বস্তুবাদীরা বুর্জোয়াদের সমর্থক হিসেবে উঠে পড়ে লেগেছিলেন সেইরকম মুহূর্তে ল্যুইস বলেছিলেন,
সামন্ততান্ত্রিক কবি তো দূরের কথা ত্রোইলাস ও ক্রেসিডা, টেম্পেস্ট, বা করিওলানুস নাটকে যে শেক্সপীয়ারের দেখা পাই তিনি অনেক বেশি বলশেভিক; রক্ষণশীল রোমান্স রচয়িতা তিনি নন।

তথ্যসূত্রঃ
. Men without Art, Wyndham Lewis.
. সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধসংগ্রহ; দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃষ্ঠা- ১৩৪, জানুয়ারি, ১৯৯৫।   

শনিবার, জানুয়ারী ১২, ২০১৩

শ্রমিক বিপ্লবেই সমাধান এবং বিপ্লবের শক্তি





রাষ্ট্রের মালিকানা যাদের হাতে থাকে তারাই শাসন ও শোষণ করে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মালিক নিশ্চয় শ্রমিক ও কৃষকেরা নয়। তবে এ রাষ্ট্রটির মালিক যতদিন না শ্রমিক-কৃষকেরা হতে পারছে ততদিন শ্রমিক আর কৃষকেরা বারেবার হাজারে হাজারে মারা পড়বে যেমন মারা পড়েছে ২৪ এপ্রিল, ২০১৩-তে সাভারের রানা গার্মেন্টসের নিচে চাপা পড়ে।

এই রাষ্ট্রের মালিকেরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধবিমান, রাইফেল, সাবমেরিন কেনে; কিন্তু শ্রমিকদের বাঁচার জন্য উদ্ধারকারি যন্ত্রপাতি কেনে না। এই রাষ্ট্রের মালিকরা নিজেদেরকে শ্রমিক কৃষকের শ্রেণি-ঘৃণা থেকে বাঁচার জন্য টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, পিপার স্প্রে কেনে, কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি এক টাকা বাড়ায় না।

এই রাষ্ট্রের মালিকেরা বাওয়ালিদের জীবিকাস্থল সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ভারতীয় বিদ্যু কোম্পানীকে দয়া দেখিয়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করতে দেয় কিন্তু দেশের প্রকৃতিকে বাঁচতে দেয় না।

এরকম একটি বর্বর পুঁজির শাসনের দেশে রাষ্ট্রের মালিকানা বদলাতে হবে; নতুবা শ্রমিক-কৃষক বাঁচবে না। শ্রমিক বিপ্লবই এর একমাত্র সমাধান।

কেননা
পুঁজিবাদি বর্বরতা যে কোনো সভ্যতার চেয়ে প্রবল।
চতুর্দিকে, প্রতি পদে এমনসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যার সমাধান অবিলম্বেই করতে মানুষ সম্পূর্ণ সক্ষম, কিন্তু তার পথে অন্তরায় হলো পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদ বিপুল সম্পদ রাশিকৃত করেছে_ আর মানুষকে বানিয়েছে সেই সম্পদের দাস। পুঁজিবাদ অতি জটিল বিভিন্ন টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করেছে_ আর টেকনিক্যাল উন্নতি প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করছে কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র আর অজ্ঞতার দরুন, মুষ্টিমেয় কোটিপতির নির্বোধ লালসার দরুন।[১]  

এইরকম অবস্থায় যখন দেশ চলতে থাকে তখন শ্রমিক বিপ্লব ছাড়া সমস্যা সমাধানের অন্য কোনো পথ সফল হতে পারে না। আর এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে তাদের নিজেদের শক্তির ও নিজেদের কমিউনিস্ট পার্টির উপরই ভরসা করতে হবে; এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালি ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস কমিউনিস্ট দুর্বলতার ইতিহাস।

কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা সবসময়ই নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীল থাকে; জনগণের নিজস্ব শক্তির উপরে ভরসা রেখেই তারা কমিউনিস্ট সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যানতারা কোনো বিদেশী শক্তির দিকে তাকিয়ে কাজ করেন নাকিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন সংশোধনবাদি পতিত ব্যর্থ বামদের ইতিহাস-এর উল্টোতারা একসময় সোভিয়েত-চিনের উপর নির্ভর করতোপরে তারা কংগ্রেস-আওয়ামির লেজুড় হয়

৫ জানুয়ারি, ২০১৩ মহিউদ্দিন আহমদ নামে বাংলাদেশে একটা নতুন বাম পাওয়া গেছিযে কারোয়ান বাজারের সরদার মতিচুর রহমানের পত্রিকা প্রথম আলোয় লিখেছিল এই অঞ্চলে বামদের শেষ ভরসা নেপাল তো এইরকম পরনির্ভর বামদের এক সময় কেবলা ছিল মস্কো-পিকিংএখন মহিউদ্দিন সাহেবরা কেবলা পালটিয়ে নেপালে নতুন কেবলা স্থাপন করতে চাচ্ছেন যা সুস্পষ্টরূপেই দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বিরোধি

আসুন দ্বন্দ্বের নিয়ম কী বলে তা একটু দেখি।

এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের বস্তুর ভিত্তি ও শর্ত, বস্তুর বিকাশের অভ্যন্তরীণ কারণ ও বাহ্যিক কারণ বুঝতে হবে। বস্তুর বিকাশের জন্য অভ্যন্তরীণ কারণ ও বাহ্যিক কারণ হচ্ছে একটি দ্বন্দ্বের দুটি দিক।
বস্তুর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বটিই বা অভ্যন্তরীণ কারণটিই তার বিকাশের মৌলিক কারণ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বটিই বস্তু বিকাশের ভিত্তি। অভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়া বস্তুর বিকাশ হবে না। অভ্যন্তরীণ কারণ না বুঝলে আমরা ভুল বস্তুর কাছে ভুল বস্তুর উতপাদন আশা করবো। ব্যাপারটা এইরকম আমরা মরিচ গাছের বীজ লাগিয়ে আম খাবার আশা করবো।
যারা বিপ্লব করার জন্য বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে তারা সকল কালেই দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বিরোধি। তারা জনগণের উপর ভরসা করে না। এইসব কানা বামদের জন্য মাও সেতুং-এর এই বানীখানা দেয়া হইল। মাও সেতুং বলছেন
আমরা আত্মনির্ভরতার পক্ষেআমরা বৈদেশিক সাহায্যের শা করি, কিন্তু তার উপর আমরা নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারি না, আমরা নিজেদের প্রচেষ্টার এবং সমগ্র সৈন্যবাহিনী জনগণের সৃজনী শক্তির উপরেই নির্ভর করে থাকি[২]

যদি মার্কসবাদীরা নিজেদের ও জনগণের উপর আস্থা রাখতে না পারে তবে তারা প্রতিক্রিয়াশীলদের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদীদেরও সমর্থন করে বসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে যে বামপন্থিদের ভেতর সংশোধন বাদের শক্তি বেড়েছিলো তার কারণ নিজেদের অ জনগণের উপর আস্থাহীনতা। ফ্যাসিবাদ উদ্ভুত হয় ও শক্তি পায় পেটি- বুর্জোয়াদের কাছ থেকে। কমিউনিস্টদেরকেও এই পেটি- বুর্জোয়াদের সমর্থন নেবার প্রয়োজন পড়ে। আর এই হতাশ পেটি- বুর্জোয়াদের সমর্থন পেতে হলে নিজের ও জনগণের শক্তির উপর আস্থা রাখতে হবে। ট্রটস্কি বলছেন,
পেটি বুর্জোয়াকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে গেলে শ্রমিকশ্রেণিকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবেআর সেই জন্য তাকে অবশ্যই নিজের শক্তির উপর আত্মবিশ্বাসী হতে হবে[৩]

কিন্তু বাংলাদেশে মিল্লাত বাম, টাইগার বাম, ঝাণ্ডু বাম, সংশোধনবাদি আওয়ামি বামদের শেষ ভরসা হিসেবে প্রতিক্রিয়াশীলদের পত্রিকা প্রথম আলো এখনো টিকে আছে।

তথ্যসূত্রঃ
তথ্যসূত্রঃ
১. ভি. আই. লেনিন; সুসভ্য বর্বরতা; ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯১৩; ২৪ খণ্ড, ১৬-১৭ পৃষ্ঠা।
২. মাও সেতুং; অর্থনৈতিক কার্য চালনা শিখে নিতে হবে; ১০ জানুয়ারি, ১৯৪৫
৩. লিও ট্রটস্কি; পেটি বুর্জোয়া কী বিপ্লবকে ভয় পায়? ফ্রান্স কোন পথে?১৯৩৪

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১০, ২০১৩

জনগণের টাকা জমছে গণশত্রুদের পকেটে











ফুলে-ফেঁপে উঠছে সম্পদ, খবর প্রথম আলোর
জনগণ গরিব থেকে দরিদ্রতর হয় আর বাংলাদেশের বিত্তশালী ব্যক্তিরা ধনী হতে থাকে। তাদের টাকা আর সম্পত্তি বাড়তে থাকে। ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে এমপি-মন্ত্রীদের সম্পদ। দশম জাতীয় সংসদে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৩ জনে। আর জনগণ ভাগ্যকে দোহাই দেয় তাদের গরিবির জন্য। কিন্তু জনগণ গরিব হচ্ছে কারণ তাদের উতপাদিত সম্পদ অন্য স্থানে গিয়ে জমা হচ্ছে। আসুন একটু চোখ বুলাই জনগণের সম্পদ কোথায় জমছে।
ঋণখেলাপিদের হাতেঃ  দেশের ব্যাংকিং খাত ২০ ঋণখেলাপির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেবাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ২০ জনের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকাআর এসময়ে পুরো ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ২৮২ কোটি টাকা[১]
২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৯২টি ঋণের বিপরীতে মোট চার হাজার ৬৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২৩ হাজার ৩৪৭ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭৬ হাজার ৩৩১।[২]
অনাদায়ী রাজস্বঃ অনাদায়ী রাজস্বের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৩১ কোটি টাকা।[২]   
কেলেংকারিঃ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩-এর প্রথম আলোর খবরে জানা যায় প্রায় ১১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকেরাবেসিক ব্যাংকে কেলেংকারি টাকার পরিমাণ ৩৫০০ কোটি টাকাসোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্ক ছাড়াও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া অপর চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হলমার্কের মতো ৮২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নজিরবিহীন জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা আত্মসা করেছে হলমার্কসহ ছয়টি ব্যবসায়ী গ্রুপ। এক সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখা থেকেই বিগত জোট সরকারের আমলে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি হয়েছেএই টাকার মধ্যে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন এছাড়া ৫০০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে বেসরকারি সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও তার পরিচালনা পরিষদ
কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রঃ কুইক রেন্টালের নামে বর্তমান সরকারের আত্মীয়স্বজন বিদ্যু খাত থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।[৩] এছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে ছয় হাজার ৩০৫ কোটি টাকা চলে যাবে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মালিকদের কাছে।
পাচার হয়ে যাচ্ছে টাকাঃ মানবকণ্ঠ জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-এর তথ্য মতে, ২০০১ সাল ২০১০ সাল পর্যন্ত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ১ হাজার ৪০৬ কোটি ডলার পাচার হয়েছেটাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা
জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার (ইউএডিপি) তথ্যমতে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় ৩০৬ কোটি ডলার, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, প্রতিবছর পাচার হয় ১৪০ কোটি ডলারআর ক্রিশ্চিয়ান এইডের তথ্য মতে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেই পাচার হয় বছরে ৩৯৭ কোটি ডলাররাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ে।[৪] 
বাংলাদেশ থেকে গত ৩৪ বছরে বা ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অন্তত দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এই অর্থ সরিয়ে নিয়ে করের সুখস্বর্গ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।[৫]
সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ২২ কোটি ৯০ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত আছেএ অর্থ প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সমান এটি সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ব্যাংকে যে অর্থ গচ্ছিত রাখা হয়েছে, তার মোট পরিমাণ।[৬]
ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে গত চল্লিশ বছরে ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি ও রফতানি এ দুই প্রক্রিয়াকেই কাজে লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে এ হিসাব পাওয়া গেছে।[৭]      

কোটিপতিদের হাতে সব টাকা: দেশে কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, এই শিরোনামে কোটিপতিদের বিস্তারিত খবর দিয়েছে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ১২ মার্চ ২০১৪তে। তাদের খবরে পাওয়া যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারী রয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৫৪ জন। এর বাইরে আরও কয়েক লক্ষাধিক রয়েছেন কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এদের কোটি টাকার বাড়ি আছে, গাড়ি আছে এমনকি নগদ টাকাও আছে কোটি টাকার ওপরে। যারা ব্যাংকের বাইরে আমানত রেখেছেন। যেমন- সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডেভেলপার কোম্পানিসহ নানা ধরনের কোম্পানিতেও রয়েছে কোটি কোটি টাকার আমানত। এদের অধিকাংশই কর ফাঁকি দিতে তথ্য গোপন করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গত চার দশকে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবার ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৫৪। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ১৩৫ জন। গত ৬ মাসের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১৯ জন। ২০০৯ সালে কোটিপতি ছিল ২৩ হাজার ১৩০ জন। এই হিসাবে গত পাঁচ বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ২৬ হাজার ৪২৪ জন। অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৭৫) এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জন। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ জনে। তখন তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৩ জন ও আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ শতাংশ। এ ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতির মোট সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৪ জন ও আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জন। মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে দুবছরের (২০০৭-০৮) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫ হাজার ১১৪ জন এবং এরও আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (অক্টোবর ২০০১-ডিসেম্বর ২০০৬) কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হিসাব সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপরে হিসাব সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ১৩০টি। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৫৩৭টি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষে এক কোটি টাকা লেনদেন হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৬৯৮টি। ২০১২ সালে ব্যাংকগুলোতে এক কোটির ওপরে থাকা হিসাব সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৭১২টি।[৮]
এছাড়া ২৪ জুন ২০১১ তারিখের আমার দেশ পত্রিকা থেকে জানা যায় স্বাধীনতার আগে ২২ পরিবার ছিল কোটিপতি, যার মধ্যে ৭ জন ছিলেন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের১৯৭৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে যাদের হিসাব বা একাউন্ট ছিল তাদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন মাত্র ৪৭ জন২০০৯ সালের শেষে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৩০ জনেসূত্র মতে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যাবে
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেউ অবৈধভাবে বেনামে একাধিক হিসাবে টাকা রাখলে তাদের শনাক্ত করা কঠিনকাজেই কোটিপতিদের প্রকৃত সংখ্যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের তুলনায় অনেক বেশিএছাড়া দেশে এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে কোটি টাকা নেই, কিন্তু কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছেতাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তালিকায় স্থান পায়নি
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিভিন্ন ব্যাংকে ২৩ হাজার ১৩০ জন কোটিপতির মোট আমানতের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৪৪ কোটি টাকা[৯]   
৩৬ পরিবারের হাতেঃ বাংলাদেশের লুটপাটকারি ধনীক শ্রেণি জনগণের সব সম্পদ লুট করেছে। পাকিস্তানের ২২ পরিবার এখন ৩৬ পরিবারে রূপান্তরিত। এই ৩৬ পরিবারের হাতে জনগণের প্রায় সব সম্পদ কুক্ষিগত। এই লুটেরা পরিবারগুলো আবার দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ১১৫ ধনীর ৭৬ জনই রাজনীতিবিদ।
লুটের খাত পোশাকঃ ২০১২ সালে ১৭ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে। এইভাবে গত দুই দশকে কী পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে তার হিসাব কেউই জানে না। এই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের প্রত্যেকটা টাকা হারামের টাকা। শ্রমিকের ঘাম চুরি করে বানানো টাকা। শ্রমিকের রক্ত লাগা টাকা। শ্রমিকের চোখের পানিতে ভিজা টাকা।
শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে মুনাফার ৫% শ্রমিকদের হক। বাস্তবে এক পয়সাও শ্রমিকগণ পায় না। মরার পরে স্বীকৃতিই পায় না আবার মুনাফার ভাগ পাবে কীভাবে? নতুন শ্রম আইন-২০১৩ এর খসড়া অনুসারে এই % এর অর্থ সরাসরি শ্রমিকদের না দিয়ে তথাকথিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা করার বিধান রাখা হইছে অর্থা মালিকদের অংশ থেকে যেখানে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল করার কথা, সেখানে শ্রমিকদের নগদ প্রাপ্য থেকেই শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বানানোর ধান্দা করা হয়েছে! কইয়ের তেলে কই ভাজা আর কি! শ্রমিক মরলে এই শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকেই টাকা দেয়া হবেমালিকের গাঁট থেকে কিছু আর দিতে হবে না
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিঃ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। সরকার গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি। ইচ্ছেমতো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।গ্রাহকদের অর্থ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছে ব্যাংকটি।বাংলাদেশের ইতিহাসে এভাবে আর কখনোই ঋণ বিতরণ করা হয়নি। পর্ষদই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সব আয়োজন করে দিয়েছে। পর্ষদের মাত্র ১১টি সভায় তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না।বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে বলেছে, অধিকাংশ ঋণই গুরুতর অনিয়ম করে দেওয়া হয়েছে।[১০]  

১৯৯১ - ২০১৩ সময়কালীন বাংলাদেশে দুর্নীতি, তথ্যসূত্রঃ বণিক বার্তা
১৯৯১-২০১৩ বিএনপি-লিগের দুর্নীতিঃ গত চার সরকারের আমলে অর্থনৈতিক সুশাসনের অভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার। বিএনপির (১৯৯১-৯৬) সরকারের আমলে পাঁচটি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের ১০ শতাংশ হারে মোট দুর্নীতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকার। পরবর্তী সময়ে (১৯৯৬-২০০১) আওয়ামি লিগ আমলে তা দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকায়। দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোট বাজেটও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বেড়ে যায় দুর্নীতির পরিমাণ। বিএনপির সর্বশেষ শাসনামলে মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ হারে হিসাব নিয়ে দুর্নীতি দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকার। তবে আওয়ামি লিগের চলমান (২০০৯-১৩) শাসনামলে এর পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ মেয়াদে দুর্নীতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা।[১১] 
টাকা পাচার: গত ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে পাচার হয়েছে। ২০ জুন, ২০১৪ তারিখের দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে জানা যায় ২০১৩ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিরা পাচার করে জমিয়েছে ৩২৩৬ কোটি টাকা।[১২] আর স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে গড়ে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৩০.৪ শতাংশ। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে গড়ে ৮০ কোটি ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬২৪০ কোটি টাকার মতো।[১৩]

বাংলার মজুর-কৃষকদের সেই সম্পদ এভাবে বেহাত হতে পারে নাজনগণের সম্পদ জনগণেরই থাকবে, এই সমাজব্যবস্থা নির্মাণ করার সময় এখন


২. দৈনিক প্রথম আলো, ৩ জুলাই, ২০১৩,
৪. মানবকণ্ঠ, ১০ জানুয়ারি ২০১৩,
৭. দৈনিক যুগান্তর, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২
৮. দৈনিক যুগান্তর, ১২ মার্চ, ২০১৪, শেষ পৃষ্ঠা
৯. আমার দে, ২৪ জুন ২০১১
১০. সুত্রঃ বাংলা এক্সপ্রেস
১১. বণিকবার্তা ডট কম, তারিখঃ ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩; প্রথম পাতা; লিংকঃ http://www.bonikbarta.com/first-page/2013/12/04/24465   
. দৈনিক যুগান্তর, ২০ জুন, ২০১৪; লেখার লিংক এইখানে
১৩. দৈনিক যুগান্তর, ২৫ জুন, ২০১৪; লেখার লিংক এইখানে। 

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...