তুমাচিং ও দামিনি; পুরুষতন্ত্র ও পুঁজিবাদের হত্যাকণ্ডের শিকার |
ভারতের দিল্লীতে
ধর্ষিত মেয়ে দামিনি ১৩ দিন লড়াইয়ের পর ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২ শনিবারে সিঙ্গাপুরে মারা গেলেন। ১৬ ডিসেম্বরের ঘটা ঘটনায় তিনি আর বাঁচতে পারলেন না। ৬
পশুর ঘটনায় শুধু কী সেই ছয়জনই দায়ি; নাকি দায়ি নেহেরু-গান্ধির পুঁজিবাদ এবং হাজার
বছরের পুরুষতন্ত্র?
আরেকটি খবরে দেখা যাচ্ছে
আরেকটি খবরে দেখা যাচ্ছে
ভারতের
নাগপুর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ভান্ডারা জেলায় ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২তে ধর্ষণ করে খুন করা হয় ১১, ৮ ও ৬ বছরের নাবালিকা তিন বোন তিন বোনকে। খাবারের লোভ দেখিয়ে স্কুলফেরত তিনটি মেয়েকে গ্রামের বাইরে এক
কুয়োর কাছে নিয়েগিয়ে তাদের উপর পৈশাচিক অত্যাচার চালায় দুষ্কৃতীরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রমাণিত হয়ে ধর্ষণ করার পর ওই তিন কিশোরীকে নৃশংস ভাবে
হত্যা করা হয়েছে।
ভারত এখন উপরি
কাঠামোয় পুঁজিবাদ ও ভেতরের সামন্তবাদের পেষণে নিষ্পেষিত ভয়ংকর নিষ্ঠুর দেশ। আর এই
নিষ্ঠুরতাকে জায়েজ করার জন্য গণশত্রুর ভূমিকায় দাড়িয়ে পশুর দায়িত্ব পালন করে
যাচ্ছে ভারতীয় আমলাতন্ত্র ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির ধ্বজাধারি কংগ্রেস, বিজেপি,
ডিএমকে, টিএমসি, সিপিআই, সিপিএম সহ সংশোধনবাদি প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল।
দেশটি তো
বাংলাদেশের চেয়েও নারী নির্যাতনে শতগুণ খারাপ। এই ভারত কিভাবে
সভ্য বলে দাবী করে? ৬৫ বছরের ভুয়া বুর্জোয়া গণতন্ত্র মৃত্যু উপহার দিয়ে শুধু
অসভ্যতাকে ফুটিয়ে তুলছে। দিল্লি একটা নষ্ট শহর। দিল্লিতে আন্দোলন নয় চিনের মত সমাজতন্ত্র
দরকার, না হলে কোনদিনই তারা সভ্য হবেন না। বাংলাদেশীদের উচিৎ এই ভারতকে ঘৃণা করা। মেয়েটির প্রতি আমরা সর্বাত্মক সহানুভুতি জানাই। এ লজ্জা এই
দুনিয়ার সকল সভ্য মানুষের।
কেন আমরা দিল্লিকে
ঘৃণা করবো? এই দেখুন এক বছরের দিল্লির বর্বতার নমুনা। ইণ্ডিয়াটুডের
২০ ডিসেম্বর, ২০১২’র খবরে বলা হয়েছে
কেবলমাত্র দিল্লী শহরে ২০১২ সালে ৬৩৫টি ধর্ষনের মামলা হয়েছে,
৭৫৪ জন ধর্ষক প্রেফতার হয়েছে, ৪০৪ জন আসামির চালান হয়েছে।
শাস্তি হয়েছে মাত্র ১ জনের, মামলার তদন্ত ঝুলন্ত আছে
৩৪৮টি। ঈভ টিজিং-এ ১৯৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ২০০, কেউ শাস্তি পায়নি। ২০১২ সালে যৌতুকের বলি ১২৮টি; আর এতে
গ্রেপ্তার ২৫৩ জন। আর বিবেচনা করুন
দিল্লির বর্তমান লোকসংখ্যা ১.৮৭ কোটি। এখন বলুন,
ভারতের মত দেশ ছাড়া কোন দেশে এরকম নারী নির্যাতন হয়।
২৩ নভেম্বর, ২০০২ এর টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে
দেখা
যাচ্ছে
ওদেশে
১৯৯৭
সালে
১৫৩৩০টি
থেকে
বেড়ে
২০০০
সালে
১৬৪৯৬
টি
ধর্ষণের
ঘটনা
ঘটে
এবং
জাতীয়
অপরাধ
গবেষণা
ব্যুরো
এ
তথ্য
প্রকাশ
করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় মাত্র ২০% ধর্ষণের ঘটনার প্রকাশিত হয় বা প্রতিবেদন
হয়।
দি স্টার ডট কমের খবরে বলা হয় যখন ভারতে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে এবং দামিনি যেদিন মারা যায় সেদিনই ১০ বছরের এক মেয়েকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে এবং তার লাশকে খালে ফেলে দেয়া হয়েছে, এই ভারতেই অপর প্রান্তে। এবং ১৪ বছরের এক স্কুল্বালিকাকে চারজনে ধর্ষণ করে মুমূর্ষু করেছে। ২৬ ডিসেম্বর বুধবার ১২ বছরের এক মেয়েকে ৪ জনে ধর্ষণ করেছে যখন সে দাদুবাড়ি যাচ্ছিল। পরদিন বৃহস্পতিবার খবর আসে ১৭ বছরের এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে; কারণ মেয়েটিকে মাসখানেক আগে ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষকদের একজনকে পুলিশ বিয়ে করতে মেয়েটিকে চাপ দেয় বা আর্থিক সুবিধা নিতে বলে।
পৃথিবীর যে কোনো
স্থানের চেয়ে ভারতে নারীর উপর নিপীড়ন বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও ভারতে নিপীড়ন
বেশি। অফিসারদের বরাত দিয়ে এএফপি’র
খবরে বলা হচ্ছে এভাবে গতএক বছরে ২৫৬৩২৯ মোট হিংস্র অপরাধের মধ্যে নারীর উপরে সংঘটিত হয় ২২৮৬৫০টি। প্রকৃত অপরাধের
সংখ্যা আরো অনেক বেশি কারণ অনেক নারীই অনিচ্ছুক থাকে পুলিশের বা অন্য সংস্থার কাছে
নিপীড়নের ঘটনাকে জানাতে।
প্রথম আলোর
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “বিবিসি বলছে,
২০১১ সালে দেশটিতে ধর্ষণের পরিমাণ আগের
বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর প্রায় ২৪ হাজার ধর্ষিত নারীর ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পুলিশের রেকর্ড বলছে, ৯৪ শতাংশ নারীর
কাছে ধর্ষকেরা ছিল পূর্বপরিচিত। এদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিবেশী এবং অন্যদের মধ্যে আছে অভিভাবক ও আত্মীয়রা। দেশটিতে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার ১৭ শতাংশ ঘটে কেবল
দিল্লিতে। এ জন্য দিল্লির এখন ‘ধর্ষণের নগর’
বলে কুখ্যাতি জুটেছে।
শুধু ধর্ষণ নয়, আরও বিভিন্ন উপায়ে নারীদের ওপরে চালানো হয় অত্যাচার-অবিচার। ২০১১ সালের পুলিশ
রিপোর্ট বলছে,
দেশটিতে আগের বছরের তুলনায় নারী অপহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যৌতুকের জন্য মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পিটানো বেড়েছে ৫ দশমিক
৪ শতাংশ, অন্যান্য যৌন নিপীড়ন বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী পাচার বেড়েছে ১২২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ শিবন অ্যান্ডারসন এবং দেবরাজ রায়ের একটি
গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর
গড়ে ২০ লাখ নারী নিখোঁজ হন। এঁদের ১২ শতাংশ
জন্মের সময়, ২৫ শতাংশ শৈশবে, ১৮ শতাংশ সন্তান প্রসবকালে এবং ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধ বয়সে।
সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যু হয় সন্তান জন্মের সময়
বিভিন্ন জখমের ফলে। নারীদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি এর মধ্য দিয়ে খানিকটা বোঝা যায়।”
ঢাকাতে ১ বছরে
৩৫টি মামলা হয়েছে। ২৮টি নারী যৌতুকের
বলি হয়েছে। হাঁ ঢাকাতে
চাঁদাবাজি ও ছিনতাই বেশি, সেটা দিল্লীতে খুব
কম, কিন্তু নারী নির্যাতন এরকম দুনিয়ার কোথাও আছে। চিনে সারাদেশেও
২৮টি নারী নির্যাতনে মৃত্যুমূখে যায়নি। সুতরাং দিল্লি একটি নষ্ট শহর,
তাকে ঘৃণা করতে হবে। চরম ঘৃণা।
বাংলাদেশে
ঘটে ধর্ষণের আরেকটি ঘটনা। তুমা চিং মারমা (১৫) রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলুপাড়ার দরিদ্র পরিবারের কিশোরী। সে কাউখালী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সে যখন আরও ছোট
ছিল, তখন তার বাবা মারা যান। মা
তাকে নিয়ে ছোট একটা পাখির বাসার মতো
বাড়িতে থাকেন। সেই বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ গজ দূরে পাহাড়ের ঢালুতে তুমা চিং মারমাকে ধর্ষণের
পর হত্যা করা হয়। ২১ ডিসেম্বর বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলোর
২৮ ডিসেম্বর, ২০১২’র প্রতিবেদনের
মাধ্যমে জানা যায় ‘মালেয়া ফাউন্ডেশনের ২০১২ সালের মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রতিবেদনে আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ-এপ্রিলে ৩৯ শতাংশ, মে-জুনে ২০ শতাংশ
এবং আগস্ট-অক্টোবরে ৩৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে ‘আদিবাসী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা’ সম্পর্কে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা যায় যে ২০১০ সালের
১ জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় ২২টি, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ১৭টি করে মামলা হয়েছে। এর
মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় ১৪টি
করে এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ১২টি মামলার চার্জশিট তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদন ফাইল
করা হয়েছে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায়
পাঁচটি করে এবং রাঙামাটি জেলায় তিনটি। মামলার শুনানি
হয়েছে
বান্দরবানে দুটি এবং রাঙামাটিতে চারটি। বান্দরবান ও রাঙামাটিতে দুটি করে মামলার রায় হলেও কোনো দোষী ব্যক্তির সাজা হয়নি। (তথ্যসূত্র: নিরাপদ গৃহ, নিরাপদ সমাজ:
পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, মেঘনা গুহঠাকুরতা)’।
প্রথম আলোর
অন্য প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ‘গত ছয় মাসে ১৭ জন আদিবাসী
নারী ও কিশোরী ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। চারজনকে ধর্ষণের পর
হত্যা করা হয়েছে,
আর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে দুজন। তিন
পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে এসব
ঘটনা ঘটেছে।’
বাংলাদেশ ও ভারতে সমান তালে চলছে নারীহত্যা, নারীধর্ষণ। পুঁজিবাদ ও পুরুষতন্ত্রের
ভেতরে নারীর কোনো বাঁচার সম্ভাবনা নেই; একমাত্র সমাজতন্ত্রই পারে নারীকে বাঁচাতে। চিনে সমাজতন্ত্র না হলে তাদেরও ভারতের মতই অবস্থা
হতো। মনে রাখা দরকার অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে একটি সাংস্কৃতিক উন্নতি না হলে সে সমাজ
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।