পুঁজিবাদ যে সমাজ আমাদের সামনে হাজির করেছে,
সেখানে পেশাগত দক্ষতা ও নৈতিকতা বিলুপ্ত হবার পথে। পেশাগত জীবনে একজন অধ্যাপক এবং একজন
ব্যাসের সহায়কের পার্থক্যগুলো এখন ঘুচে যাচ্ছে। অথবা একজন বিজ্ঞানীর সাথে একজন মুদি
দোকানদারের একই আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানাগারে গবেষণাকারী একজন বিজ্ঞানী
যেমন টাকালোভী হয়ে গেছেন তেমনি একজন সরল কৃষক আর সরল নেই, তিনিও লোভে পড়ে বিষক্রিয়ায়
মারা যাচ্ছেন পর্যন্ত।
আমি সব ক্লাসে একটি গল্প বলি, শিক্ষকদের
বুঝতে আপনার কাজে লাগবে। আমরা বাস স্টপে দেখি, বাসের হেলপার চেঁচাচ্ছে, এই আসেন, মতিঝিল
২০ টাকা, ডাইরেক্ট মতিঝিল ২০ টাকা, আসেন সিট আছে খালি ২০, নন স্টপ মতিঝিল ২০ টাকা।
অন্যদিকে একজন শিক্ষক অবিরাম ডেকে চলেছেন,
কেমিস্ট্রি খালি ৫০০ টাকা, ইংরেজি খালি ৫০০ টাকা, ৪ মাসে কোর্স শেষ, প্রতি মাসে খালি
৫০০। আগে আসলে আগে শুরু, জনপ্রতি খালি ৫০০। আর ডাক্তারদের কথা তো বলাই বাহুল্য, ডাক্তার
মানেই দোকান খুলে বসা।
অন্যদিকে আছে ইঞ্জিনিয়াররা, তারা যে কত
ভাবে টাকা পয়সা নয় ছয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তা ভাবা যায় না। এগুলা কয়েকটি পেশার আলোচনা
মাত্র। বাস্তব পুঁজিবাদ এভাবে হাজার হাজার পেশাগুলোকে পুঁজির জোয়ালের নিচে বন্দি করেছে।
বাসের হেলপারের সাথে শিক্ষকের বা ডাক্তারের
পার্থক্য কোথায়? একেবারেই পেশাগত পার্থক্যগুলো ঘুচে গেছে। যেসব শিক্ষক বা ডাক্তার ব্যবসা
করতে পারে না, তারা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকের সাথে ঘোট পাকায়, কমিটি হান
তান ভাউচার লইয়া থাকে।
টাকালোভী মানুষকে বোঝার জন্য, এই পুঁজিবাদী
সমাজকে বোঝার জন্য, এইসব উদাহরণ দেখা যায়। ব্যক্তিগতভাবে দেখলে, আপনি শুধু একটি গাছ দেখতে পাবেন, জঙ্গল দেখতে পাবেন না;
আর শুধু জঙ্গল দেখলে আবার গাছ দেখতে পাবেন না। আপনাকে সার্বিক এবং বিশেষ দুভাবেই দেখতে
হবে। সত্য দেখে এই সমাজকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে শিক্ষকের কাজ, কিন্তু শিক্ষকরা দেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেত্ন নয়। যারা দেখে না, তাদেরকে অন্ধ বলা হয় এই সমাজে।