নুপুর পায়ে নিহত বস্ত্রবালিকা |
বাংলাদেশের শ্রমিকগণ আগুনে পুড়ে, অট্টালিকা ধ্বসে, দুর্ঘটনায়, পানিতে ডুবে, অপুষ্টিতে মারা যান। কারখানা শ্রমিকদের এই নিয়তি পালটাতে হলে আমাদের সম্মুখে একটিই সমাধান রয়েছে এবং সেটি হলও শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব কায়েম করা। কিন্তু সেটির ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে চিনের প্রাচিরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বুর্জোয়াশ্রেণির একনায়কত্ব। গত ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ বাংলাদেশের
সাভারে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যায় প্রায় ২০০০ শ্রমিককে হত্যা করা হয়।
সপ্তাহখানেকের উদ্ধারে লাশ পাওয়া গেলো চারশ। আহত হলও ২৫০০। বিদেশি প্রচারমাধ্যমগুলোতেও মৃতের ও নিখোঁজের সংখ্যা ১৫০০-এর বেশি
বলা হয়েছে। সারা দেশবাসি ক্ষুব্ধ। লাশ উদ্ধার তো হলই
না লাশ গুম করা নিয়ে স্বজনেরা সর্বদাই তটস্থ থেকেছেন। সারাদেশের
শ্রমিক-কৃষক কেঁদে চলেছেন শেষ লাশটির জন্য। অথচ এই রাষ্ট্রযন্ত্র লাশের অধিকার পর্যন্ত ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। এইরকম অবস্থায় শ্রমিক-কৃষকদের পক্ষে দাড়ানো যে কোনো শ্রমিকশ্রেণির
দলগুলোসহ যে কোনো মানুষের পক্ষেই
জরুরি ছিলো। কিন্তু দেশবাসি দেখলো অন্য ব্যাপার। ঘটনার পরপরই বামমোর্চা, সিপিবি ও বাসদ
গণহত্যাকারিদের শাস্তি ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের
দাবিতে হরতাল ঘোষণা করেছিলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে বিএনপিও হরতাল ডেকেছিলো।
আর মালিকদের চাপে জনশত্রুদের একাংশ লীগ হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলো এবং অন্য অংশ বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার
করেছিলো। এরপর শ্রমিকশ্রেনির
নামধারী সিপিবি নামক পেটি-বুর্জোয়াদের পার্টিটিও হরতাল থেকে সরে গিয়েছিলো। ১ মে, ২০১৩ বামমোর্চা
এবং বাসদও হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়। অর্থাৎ ২০০০ শ্রমিককে
হত্যা করা হলেও বাংলাদেশে শ্রমিক শ্রেণির দলগুলো ন্যায্য দাবিতে হরতাল দিয়ে নিজেদের দৃঢ় মনোভাব বজায় রাখতে
পারেন না। হে মহান শ্রমিকগণ,
তোমাদের জন্য বাংলাদেশে এখন আর কে আছে?
অথচ গতকাল ৩০ এপ্রিল,
২০১৩তেও আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইলে শ্রমিকগণ রাস্তায় ছিলেন। ২৪ এপ্রিলের পরে সাভার,
নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুরে প্রায়
প্রতিদিনই শ্রমিকগণ সহিংস বিক্ষোভ করেছেন। ২৬ এপ্রিলে
চট্টগ্রামে শ্রমিকগণ মিছিল থেকে গাড়ি ভাংচুর পর্যন্ত করেছিলেন।এমনকি ঘটনার পরপরই
শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে সরকার ও মালিকরা ভীত হয়ে বিজিবি
পর্যন্ত মোতায়েন করেছিলো।
শ্রমিকদের
পক্ষে দাঁড়ানো যেতে পারে কেবলমাত্র শ্রমিকদের রাষ্ট্র
কায়েম করার মাধ্যমেই। কিন্তু এখনো যদি শ্রমিক শ্রেণির
দলগুলো গত চল্লিশ বছরের লুটপাটে গড়ে ওঠা লোভী, পিশাচ, নিষ্ঠুর, নির্দয়, মুনাফাখোর, ব্যবসামনস্ক
মধ্যবিত্তের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে
তবে শ্রমিকমুক্তি ঘটতে এদেশে বহু দেরি আছে।
দুই প্রধান রাজনৈতিক দল লিগ-বিএনপি তখনই বাংলাদেশ থেকে বাতিল হবে
যখন
কমিউনিস্টরা দির্ঘমেয়াদি কর্মসূচি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন
হয়ে
শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব কায়েম করবেন। কিন্তু হয়তো আজ
বাংলাদেশে সেই লক্ষণ আদৌ নেই, কিন্তু লক্ষণ দেখা দিতে কতক্ষণ। আমরা মনে করি
বাংলাদেশের শ্রমিকের জন্য রয়েছে এই শ্রমিক বিপ্লবেই
সমাধান এবং তারাই বিপ্লবের নিজস্ব শক্তি।
আজ বিশ্বের অন্যান্য
দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিল্পশ্রমিক
পেতে সবচেয়ে কম মজুরি
দিতে হয়। অর্থাৎ
সবচেয়ে সস্তা শ্রম এখন বাংলাদেশে। সস্তায় শ্রম শোষণ করতে করতে সাম্রাজ্যবাদীরা
বাংলাদেশকে শ্রমিকের জন্য অগ্নিকুণ্ড
বানিয়েছে। এমতাবস্থায়, আমরা
শুধু বলতে পারি মুক্ত করো এই আগুন ও বর্বরতা থেকে। হে মহান শ্রমিকগণ, কর্তৃত্ব
গ্রহণ করো।